ঊষার আলো রিপোর্ট : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এরপর কবে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে, তা ওই দিন স্পষ্ট হবে। এই ঘোষণাপত্রের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার একটি আইনি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার চিন্তা করছে। আগামী নির্বাচনে যারাই জিতুক, এই ঘোষণাপত্রকে ধারণ করবেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসবে সরকার। অধিকাংশ বিষয়েই রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে কিছু বিষয়ে দ্বিমতও রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্বিমতের জায়গাগুলো পরিষ্কার করবে। তিনি বলেন, ‘আলোচনার স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি। খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। ঘোষণাপত্রটি সবার উপস্থিতিতেই প্রকাশ করা হবে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থিত থাকবে। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিতে চায় বলে জানিয়েছে বিএনপি। এ ব্যাপারে মাহফুজ বলেন, যেহেতু এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সুতরাং খুব বেশি সময় নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে খসড়া হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘোষণাপত্র অবলম্বনে একটি আইনি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার চিন্তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যারাই জিতুক, এই ঘোষণাপত্রকে ধারণ করবেন।
এ সময় জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টির অবস্থান আমাদের কাছে পরিষ্কার। এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকে তাদের আমরা ডাকিনি। তাই ঘোষণাপত্র বিষয়েও তাদের সঙ্গে কথা বলা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না। আর বাম দলগুলোর মধ্যে অনেক সংগঠন আছে, তবে গণ-অভ্যুত্থানে যেসব দল প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আরও হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। তবে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে জনমত তৈরিতে প্রচারপত্র বিলি ও জনসংযোগ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ বিষয়ে ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছিলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে আলোচনা করা হবে। সরকার আশা করছে, আলোচনা শুরু করে আগামী সপ্তাহেই তা শেষ হবে। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারি এই ঘোষণা প্রকাশের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই সময়ে তা ঘোষণা নাও হতে পারে। কয়েক দিন বেশি লাগতে পারে।
ঊষার আলো-এসএ