অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ
বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল তারা শোষণের যাতাকল থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কার যদি এদেশের শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, নারী তথা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণের না হয় তাহলে সেই সংস্কার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
ইকবাল কবির জাহিদ গতকাল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের ভূত এখন এইসব মৌলবাদী চক্রের উপর ভর করেছে। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কমরেড অমল সেন স্মরণমেলার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরলা মঞ্চে তিন দিনব্যাপী স্মরণমেলার প্রথম দিন ‘বৈষম্য সমতার সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটির সহ-সভাপতি কংকন পাঠক।
অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, বাম গণতান্ত্রিক জোট যশোর জেলার সমন্বয়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান, নারী মুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক স্বপ্না সুলতানা, কৃষক নেতা মিজানুর রহমান, যুবমৈত্রী নেতা মনজুরুল আলম, সিংগিয়া আদর্শ কলেজের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র অধিকারী, সাবেক ব্যাংকার ঘণশ্যাম মজুমদার প্রমুখ।
আলোচনার আগে কমরেড অমল সেনসহ প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে দুপুর ১২টায় সমাধি সৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের মাধ্যমে কমরেড অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকীর তিনদিনব্যাপী স্মরণমেলা শুরু হয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ীতে প্রয়াত কমরেড অমল সেনের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী।
এরপর দলের যশোর ও নড়াইল জেলা কমিটি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী যুবমৈত্রী, নারী মুক্তি পরিষদ, বাকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
আজ ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ, তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কমরেড অমল সেনের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী অমল সেন স্মরণমেলা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। অমল সেন স্মৃতিরক্ষা কমিটি এই স্মরণমেলা এবং আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এরপর বিকেলে বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরলা সিংহ মঞ্চে আলোচনা শুরু হবে। প্রথম দিন আলোচনার বিষয় ‘বৈষম্য সমতার সমাজ’, দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আলোচনার বিষয় ‘তেভাগা আন্দোলন ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ এবং শেষ দিন আগামী শনিবার আলোচনার বিষয় ‘মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভুমিকা’।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে তিনদিন সন্ধ্যায় আবৃতি ও গণসঙ্গীত পরিবেশিত হবে।
অমল সেন ১৯১৩ সালের ১৯ জুলাই বৃটিশ ভারতের তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইল মহকুমার আফরা গ্রামের এক সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হয়ে তিনি ‘অনুশীলন’ সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে খুলনার বিএল কলেজে রসায়নশাস্ত্রে পড়া অবস্থায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৩৩ সালে এই অঞ্চলের জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৬ সালের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
আজীবন সংগ্রামী কমরেড অমল সেন ২০০৩ সালে ১৬ জানুয়ারি ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।