UsharAlo logo
শনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পানি ছাড়ছে না ভারত, তিস্তার বুকে বিস্তীর্ণ চর

ঊষার আলো রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ির গজলডোবায় তিস্তা নদীর বাঁধের সব কটি গেট বন্ধ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নদীর পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ব্যারাজের উজানে ও ভাটিতে নদীর বুকে বিশাল চর জেগে উঠেছে। পানির সংকটে হুমকির মুখে পড়েছে ওই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর বোরো ধানের জমি। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বদলে যাচ্ছে তিস্তার তীরবর্তী এলাকার জীবন-জীবিকা। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

রংপুর অঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিস সূত্র জানায়, এক মাস ধরে তিস্তা ব্যারাজ এলাকার পানির প্রবাহ কমে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের শুরুতে রংপুর কৃষি অঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া ও দিনাজপুরের আংশিক মিলে ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় ধরা হয়েছিল। ভারত তিস্তার পানি একতরফাভাবে ভিন্ন নদীতে প্রবাহিত করায় তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এরপরও বর্তমানে তিস্তায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় এই সেচ এলাকা কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

এখন তিস্তায় যে পানি সারা বছর ধরে ভাটিতে আসছে তা ভারত দিচ্ছে এমনটি নয়। ভারত তাদের অংশে তিস্তায় যে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করেছে, সেখান থেকে ব্যারাজের গেট দিয়ে পানি চুইয়ে ভাটিতে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই পানি বাংলাদেশের তিস্তায় আসছে। যার পরিমাণ গড়ে ২ হাজার কিউসেক। এই পানি তিস্তায় ভারত ধরে রাখতে পারে না বলেই বাংলাদেশ অংশে নেমে আসে। নদী বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নদীর প্রবাহিত পানির শতকরা ৫০ ভাগ ভাটিতে প্রবাহিত না হলে নদী ক্রমাগত মরে যায়। ভারত তাই করছে। ফলে তিস্তা নদী ক্রমাগত শীর্ণকায় হয়ে মরে যাচ্ছে। এমন উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তর অঞ্চল রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান।

তিনি আরও বলেন, বর্ষা কিংবা পাহাড়ি ঢলের কারণে ভারত তিস্তার পানি যখন ধরে রাখতে পারে না তখন পানি ছেড়ে দিলে ভাটিতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। এতে ভেসে যায় ফসলি জমি, বাড়িঘর। এই পানি তিস্তার ভাটিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফলে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ রাখায় তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। কোথাও কোথাও জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করছেন স্থানীয়রা।

রংপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭৭ হেক্টার জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে তিস্তায় পানি না থাকায় তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় যে কৃষি জমি রয়েছে সেখানে খরা মৌসুমে নিজস্ব উদ্যোগে সেচ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, তিস্তা ব্যারেজের সামনে ও ভাটিতে বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠেছে। এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুষ্ক খালে পরিণত হয়েছে। এদিকে তিস্তা নদীর পানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসার কারণে ব্যারাজ কমান্ড এলাকার কাঙ্ক্ষিত কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিস্তা পারের কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এবার বারো মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করা যাবে। তবে তা চাহিদামতো করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে জমিতে সেচ যন্ত্র বসিয়ে বোরো ধানের চাষের জমি তৈরি, চারা রোপণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়ার পরও ব্যারেজের সামনে বিশাল চর পড়েছে। পুরো নদীতে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নৌকার পরিবর্তে হেঁটে নদী পারাপার করছে হাজার হাজার মানুষ। জেলেরা পেশা বদল করে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। নৌকার মাঝিরা এখন কৃষি কাজ করছেন। তিস্তার দুই পাড়ে ১০১টি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। মাছ কমে গেছে। নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় গাছ পানির আভাবে শুকিয়ে মৃতপ্রায়। নদীকে ঘিরে এলাকার মানুষের নৌকাবাইচসহ যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে তা এখন আর দেখা দেয় না।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে মূলত সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্যই তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত তিস্তা নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে। এখন ভারতের অংশে গজলডোবায় পানি থই থই করছে বলে সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

ওই এলাকার কৃষক আজিজ উদ্দিন, সোলেমান আলী, সালাম শেখ, আফজাল হোসেনসহ অনেকে জানান, বালুমাটির এলাকা হওয়ার কারণে এখানে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি নিয়ে ধান চাষ করা সম্ভব নয়। কারণ ওই পানি এক ঘণ্টার বেশি থাকে না। এতে খরচও পড়ে অনেক বেশি। এমন অবস্থায় তিস্তা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ঊষার আলো-এসএ