ঊষার আলো ডেস্ক : আধুনিক মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের পথে সবচেয়ে বড় হুমকি স্ট্রেস। হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিলতা, লিভার সিরোসিসসহ আরো নানা রোগের মূলে রয়েছে স্ট্রেস। এগুলো নিরাময়ে স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ডলার। এই সমস্যা মোকাবেলায় সে-দেশের শত-শত হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতিরোধমূলক যত্ন হিসেবে রোগীদের যোগ-মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। (Seattle times, May 17 2009)
হার্ভার্ডের ফিজিওলজিস্ট ওয়াল্টার ক্যানন আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগেই আবিষ্কার করেন যে, আমরা যখন স্ট্রেসড হই তখন আমাদের রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশীর চাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।
হার্ভার্ডেরই আরেক গবেষক ডা. হার্বার্ট বেনসন ১৯৬৭ সালে দেখান যে, মেডিটেশন আমাদের শরীরে স্ট্রেসের ঠিক বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঘটায় অর্থাৎ রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশীর চাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে স্বাভাবিক রাখে। তার লেখা ‘দা রিলাক্সেশন রেসপন্স’ বইয়ে তিনি বলেছেন, স্ট্রেসের কারণে আমাদের দেহে যে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স সৃষ্টি হয় সেটিকে প্রশমিত করে মেডিটেশন মন ও দেহকে অধিকতর শান্ত ও সুখী অবস্থায় নিয়ে আসে। বইটি ছিল সর্বাধিক বিক্রিত। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেডিটেশন আমাদের দেহে স্ট্রেসের জন্যে দায়ী হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।
ক্রনিক স্ট্রেস আমাদের শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে দিয়ে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এজমা, সোরিয়াসিসের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৬ ও ২০০৮ সালে গবেষক ড্যান উইজক ও তার সহকর্মীরা ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এক অভিনব পদ্ধতি আলট্রা উইক ফোটন ইমিশন মেসারমেন্ট প্রয়োগ করে তাদের দেহকোষে বিক্রিয়াশীল অক্সিজেন পরিমাপ করেন এবং দেখতে পান যে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন তাদের দেহে এই ফোটন রেডিয়েশন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা অনেক কম।
স্ট্রেস থেকে মুক্তি না পেলে শরীর মন পেশা সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই এতসবের ক্ষতি না করে প্রতিদিন নিয়মিত মেডিটেশন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। মেডিটেশনের মাধ্যমে সাফল্য, প্রশান্তি ও নিরাময় লাভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ। প্রায়োগিক কার্যকারিতায় বিশ্বজুড়ে মেডিটেশন হয়ে উঠেছে নিরাময়ের বিকল্প পদ্ধতি, সাফল্যের অব্যর্থ প্রক্রিয়া ও প্রশান্তির লাগসই টেকনিক।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষ ধ্যান বা মেডিটেশন করে নিজেদের জীবন-যাপনকে করে তুলেছেন অর্থবহ। এসব প্রেক্ষাপট সামনে রেখে বাংলাদেশে ২১ মে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালিত হবে। মেডিটেশন দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘নিয়মিত মেডিটেশন, সুস্থ সফল সুখী জীবন’।
বাংলাদেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের উদ্যোগে শুক্রবার ২১ মে ফাউন্ডেশনের সেল, প্রিসেল, শাখা, সেন্টারসহ দুই শতাধিক ইউনিটে সাংগঠনিকভাবে এবং ঘরে ঘরে ব্যক্তিগতভাবে লাখ লাখ মানুষ সম্মিলিত মেডিটেশনে অংশ নেবেন। এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় সারা দেশে এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন শাখা ও ভার্চুয়াল সেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধ্যানমগ্ন হবেন।
বাংলাদেশে মেডিটেশন চর্চার ইতিহাসে টানা ২৯ বছর ধরে একক নেতৃত্ব দিচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ১৯৯৩ সাল থেকে উদ্ভাবক কর্তৃক এককভাবে পরিচালিত কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশনের চার দিনের কোর্সটির ৪৭৪টি ব্যাচ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে যুগান্তকারী ৪৭৫তম ব্যাচ। মেডিটেশন শেখায় আগ্রহীরা সেই বিরল সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার ২১ মে ফাউন্ডেশনের সেল, প্রিসেল, শাখা, সেন্টারসহ দুই শতাধিক ইউনিটে সাংগঠনিকভাবে এবং ঘরে ঘরে ব্যক্তিগতভাবে লাখ লাখ মানুষ সম্মিলিত মেডিটেশনে অংশ নেবেন। এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় সারা দেশে এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন শাখা ও ভার্চুয়াল সেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধ্যানমগ্ন হবেন। মেডিটেশন দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘নিয়মিত মেডিটেশন, সুস্থ সফল সুখী জীবন’।
(ঊষার আলো-এমএনএস)