কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই ইস্যুতে ভারত একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কাশ্মীর একটি ত্রিপাক্ষিক ইস্যু, যেখানে পাকিস্তান, ভারত ও চীন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, এবং সমাধান হতে হবে জাতিসংঘের প্রস্তাব ও কাশ্মীরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে।
তিনি বলেন, এই বিজয় কেবলমাত্র অস্ত্রের নয়, এটি আদর্শ ও সত্যের বিজয়। এবং সেই বিজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।
তিনি ভারতের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্যপ্রচার ও প্রপাগান্ডার অভিযোগ তুলে বলেন, পুলওয়ামা ঘটনার পর ভারতীয় মিডিয়া একতরফা ও ভিত্তিহীন প্রচার চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান সবসময় নিরপেক্ষ তদন্ত ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের দাবি জানিয়েছে, যা ভারত উপেক্ষা করেছে — বিশেষ করে পেহেলগাম ঘটনার পর।
সাক্ষাৎকারে ডিজি আইএসপিআর ভারতের মিডিয়ায় গোল্ডেন টেম্পলে হামলার যে দাবি করা হয়েছে তাকে লজ্জাজনক মিথ্যা বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান সব ধর্মীয় স্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিশেষ করে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র নানকানা সাহিব, পানজা সাহিব ও করতারপুরের মতো স্থাপনাগুলোর প্রতি।
বিমানবাহিনীর ভূমিকায় গর্ব
৬–৭ মে ভারত-পাকিস্তানের বিমান সংঘর্ষকে ‘টেক্সটবুক উদাহরণ’ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি সামরিক শিক্ষায় বহু বছর ধরে চর্চিত হবে। তিনি জেএফ-১৭ থান্ডার, জে-১০সি, ফাতেহ-১ ও ফাতেহ-২ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং জানান, দেশের সামরিক সক্ষমতার বড় অংশ এখনো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব্যস্ত।
ভারতকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক আখ্যা
ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত করেন ডিজি আইএসপিআর। তিনি বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে, যার ফলে প্রতিরোধ জন্ম নিচ্ছে, অথচ ভারত সেই প্রতিরোধের দায় পাকিস্তানের ওপর চাপাচ্ছে।
কাশ্মীর ও পানিসম্পদ নিয়ে হুঁশিয়ারি
কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের নয়, চীনও এতে জড়িত। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘের প্রস্তাব ও কাশ্মীরবাসীর ইচ্ছার ভিত্তিতে হতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয়টি প্রধান নদী কাশ্মীর থেকে উৎসারিত হয়েছে। কাশ্মীর যদি পাকিস্তানের অংশ হয়, তাহলে ভারত নিজেই নিম্ন অববাহিকার রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পানির প্রবাহ বন্ধ করার চিন্তা কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক করতে পারে না।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, যদি ভারত আগ্রাসন পুনরায় চালায়, তবে পাকিস্তানের জবাব হবে আগের চেয়ে দ্রুত এবং কঠিন।
ডিজি আইএসপিআর তার বক্তব্য শেষ করেন এই মন্তব্যের মাধ্যমে: দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন কাশ্মীর ইস্যুর ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত হবে।
ঊষার আলো-এসএ