UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে জমেছে ৮ হাজার কনটেইনার

ঊষার আলো রিপোর্ট
মে ২৭, ২০২৫ ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মকর্তাদের টানা প্রায় ১২ দিন কলমবিরতির কারণে বন্ধ ছিল পণ্যের শুল্কায়নসহ সব ধরনের কার্যক্রম। শুল্কায়ন না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাসও কমে যায়। এর প্রভাবে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৮ হাজার কনটেইনার জমে গেছে।

সময়মতো কনটেইনার খালাস নিতে না পারায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। বন্দর ঘোষিত চারগুণ স্টোর রেন্টও গুণতে হবে তাদের। ব্যবসায়ীরা এই স্টোর রেন্ট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে রোববার কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করায় সোমবার থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী এ প্রতিষ্ঠান।

আমদানি-রপ্তানিকারক, তাদের প্রতিনিধি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের উপস্থিতিতে গমগম করছে কাস্টম হাউজ। এতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজেও কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। এ কারণে পণ্যের শুল্কায়ন ও খালাসে কিছুটা প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। তবে সোমবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে প্রতিদিন আমদানি-রপ্তানি মিলে ৭ হাজার ডকুমেন্ট তথা বিল অব এক্সপোর্ট ও বিল অব ইমপোর্ট জমা পড়ে। এর মধ্যে আমদানির ডকুমেন্টই জমা পড়ে ৫ হাজার। কলমবিরতি চলাকালে এ সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছিল বলে সূত্র জানায়।

এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজেও ১৪ মে থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন কর্মকর্তারা। প্রথমদিকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এবং শেষের দিকে এসে পূর্ণদিবস কলমবিরতিও পালন করা হয়। এ সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ছিল ফাঁকা। কোনো ধরনের ডকুমেন্ট জমা নেওয়া হয়নি। কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি কর্মকর্তারা।

এ অবস্থায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধিরা এসে ফিরে যান। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস না নিলে চারগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় আমদানিকারকরা জিম্মি হয়ে পড়েন।

একদিকে কলমবিরতির কারণে শুল্কায়ন করতে না পারায় পণ্য খালাস করতে পারেননি তারা, অন্যদিকে বন্দরে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি দিন কনটেইনার ইয়ার্ডে পড়ে থাকায় চারগুণ জরিমানার মুখে পড়তে হয়। আমদানিকারক তথা ব্যবসায়ীদের চতুর্মুখী লোকসান গুনতে হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের)। রোববার যেখানে বন্দরে কনটেইনার ছিল ৪২ হাজার ৩১৫ টিইইউএস, সেখানে সোমবার ছিল ৪৩ হাজার ৮২৭ টিইইউএস। রোববার বন্দর থেকে ২ হাজার ৭৪৯টি কনটেইনার ডেলিভারি হয়। সোমবার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৫৫ টিইইউএস। এছাড়া সোমবার পর্যন্ত ১৯টি অফডকে কনটেইনার ছিল ৮৬ হাজার টিইইউএস।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে রোববার কনটেইনারবাহী ১৭টি জাহাজ অবস্থান করছিল বার্থিংয়ের অপেক্ষায়। এর মধ্যে সোমবার জোয়ারের সময় ৭টি জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। ১৭টি জাহাজে কনটেইনার বোঝাই ছিল ২৪ হাজার টিইইউএস।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়ে থাকে। তবে কাস্টম হাউজে কর্মবিরতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে বন্দরে। এ সময়ে কিছুটা কমে ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে।

বাংলাদেশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘কেন ব্যবসায়ী চান না, তার পণ্য বন্দরে পড়ে থাকুক। পণ্য খালাস করতে গেলে আমরা অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন হই। কলমবিরতির কারণেও পণ্যের শুল্কায়ন করাতে পারেননি অনেক আমদানিকারক। তার ওপর এখন পোর্ট ডেমারেজ চারগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় বা ফ্রিটাইমের পরে অতিরিক্ত সময় কনটেইনার ইয়ার্ডে পড়ে থাকলে এজন্য চারগুণ ‘স্টোর রেন্ট’ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চারগুণ স্টোর রেন্ট প্রত্যাহার দাবি করেন।

ঊষার আলো-এসএ