UsharAlo logo
সোমবার, ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫৪ দিন পর ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা

ঊষার আলো রিপোর্ট
জুন ২২, ২০২৫ ৬:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দীর্ঘ ৫৪ দিন পর সশরীরে ক্লাসে ফিরেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। শনিবার পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য সরাসরি ক্লাস স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ; যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস চালু ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস সূত্রে জানা যায়, পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রক্টোরিয়াল টিম যায় সেখানে যায় এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার আহবান জানায়।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুম তো বটেই, ক্যাফেটেরিয়াসহ অন্যান্য স্থানগুলোতেও শিক্ষার্থীদের আড্ডা চোখে পড়েছে। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আজ ক্লাস শুরু হলো, আশা করা যায়, ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। প্রথম দিন হওয়ার পরও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত বলে জানান তারা।

বিবিএ শিক্ষার্থী অর্পা ইসলাম জানান, আজ সশরীরে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই প্রতিটি ক্লাসে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে আমরা সবাই স্বাভাবিক অ্যাকাডেমিক পরিবেশে ফিরতে প্রস্তুত। যারা এখনো রাস্তা আটকে আন্দোলন করছে, তাদের এ কর্মসূচির আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। যখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিচ্ছে, তখন এ ধরনের আন্দোলন শুধু পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আমরা চাই, সবাই মিলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ইউআইইউ’র বহিষ্কৃত হওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নেই। আশেপাশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আন্দোলন চলছে।’

এদিকে ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনেই রাজধানীর নতুনবাজার সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ করতেও দেখা গেছে। ‘অবৈধ বহিষ্কার’ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘স্বেচ্ছাচারী’ আচরণের অভিযোগ এনে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নতুন বাজার মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী সড়কে যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে লাঠিচার্জে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। যদিও কিছু সময় পর ফের নতুনবাজার মোড়ে এসে সড়ক আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যদিও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই তারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে আসছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলবে। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা বহুবার শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।’

প্রসঙ্গত, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ থাকায় জুন মাসের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাসপেন্ডেড বহিষ্কার (ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বহিষ্কার হবে) এবং ১ জনকে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ যে চূড়ান্ত নয়, সে সময় বিষয়টি স্পষ্ট করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩ জুন চিঠি প্রাপ্তির পর বহিষ্কার হওয়া ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২জনই শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে ১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রথম দফায় ৫ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকসহ ডাকা হয়েছে এবং তাদের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। প্রথম দফায় শাস্তি প্রত্যাহার হওয়ার শিক্ষার্থীরা হলেন— মেহেদী হাসান মামুন, হাসান মাহমুদ, আনিক আনজুম মনা, ফায়াজ কবির ও সাদিয়া রহমান। বহিষ্কৃত হওয়া বাকি শিক্ষার্থীদেরকে ২১ ও ২২ জুন অভিভাবকসহ ডাকা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঊষার আলো-এসএ