UsharAlo logo
শনিবার, ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই শহীদ দিবস পালন : অভ্যুত্থানের লক্ষ্য দ্রুত অর্জনই কাম্য

ঊষার আলো রিপোর্ট
জুলাই ১৭, ২০২৫ ৫:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গতকাল সারা দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে জুলাই শহীদ দিবস। দিনটি ছিল জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার প্রথম বার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছাড়াও ঢাকায় দুই যুবক, চট্টগ্রামে দুই শিক্ষার্থী ও এক পথচারীসহ তিনজন, অর্থাৎ সারা দেশে মোট ছয়জন প্রাণ হারান। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু ছিল জুলাই আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। গত বছরের ১৬ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে তিনি এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। এ সময় পুলিশ খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। আবু সাঈদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গুলি করার ভিডিও সেদিনই গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিন থেকেই সারা দেশে তীব্র গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। এর পরিণতিতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবছর ১৬ জুলাইকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এ উপলক্ষ্যে দেশের সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়া সারা দেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পর স্বভাবতই জনমনে যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তা হলো, যে লক্ষ্য সামনে রেখে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর কত দিন বাকি? আর কত পথ পাড়ি দিতে হবে জনগণকে? বস্তুত জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। অভ্যুত্থানের পর মানুষ বিপুলভাবে আশাবাদী হয়ে ওঠে-দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, সব ধরনের অনিয়ম-অরাজকতা-দুর্নীতির অবসান ঘটবে, তারা ফিরে পাবে জীবনের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য ন্যায়সংগত অধিকার। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশবাসীর এসব প্রত্যাশার বিষয়টি অনুধাবন করে বেশকিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। এসব কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পাদনের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। প্রকৃতপক্ষে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজ শুরু করে হয়তো কিছুটা এগিয়ে নিতে পারবে। গণতান্ত্রিক সরকারকে তা সম্পন্ন করতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি। জনগণের প্রত্যাশা, সেই নির্বাচনটি সময়মতো এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুসংহত করবে, যাতে দেশে আর কখনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। সেই সঙ্গে জুলাই আন্দোলন প্রতিরোধে যারা হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য যত দ্রুত অর্জন হবে, ততই দেশবাসীর মঙ্গল।

ঊষার আলো-এসএ