ঊষার আলো প্রতিবেদক : দেশের চলমান করোনা ভাইরাস যেন চরম আতঙ্ক। এ ভাইরাসের আগ্রাসন ও হিংস্্র থাবায় দেশের চাকা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা অপরিমিত। করোনা সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হারিয়ে যাচ্ছে স্বজনদের প্রিয়জনেরা। তবুও করোনা সংকটের মধ্যে মানুষের দিন নিপেতিত করার জন্য থেমে নেই জীবন জীবিকার সংগ্রাম। দেশের চলমান এ মহামারীর মধ্যে সরকারি চাকুরীজীবী ছাড়া অধিংকাশ মানুষই রয়েছে চরম অর্থনৈতিক সংকটে। চরম এ অর্থনৈতিক সংকটে থাকলেও এ মানুষগুলো তাদের পরিবারের সদস্যদের আহার যোগাতে জীবন জীবিকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে বর্তমানে বেশ দুর্বল অবস্থায়ই নগরীর অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া এনজিও’র ঋণ করা টাকা দিয়ে চালানো অনেক দোকানে ভালো বেচাকেনা না হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বর্তমানে জীবন জীবিকার তাগিদে অনেকই আজ তার নিজস্ব স্থায়ী ব্যবসা ছেড়ে ওঠে উঠেছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীতে। অনেকেই বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা কেউ হোটেল ব্যবসা ছেড়ে, তরকারীর ভ্রাম্যমান ফেরীওয়ালা, কেউ কাঠের কাউ ছেড়ে রংঙের কাজ ধরেছে আবার কেউ ফুটপাতের কাপড়ের দোকান ছেড়ে রূপসা নতুন বাজার পাইকারী মৎস আড়ৎ হতে থেকে মাছ কিনে এনে ফেরী করে ব্যবসা করছে । আবার অনেকেই ছোট ছোট দোকান দিয়ে বসেছে চা-বিড়ি নিয়ে। করোনার প্রভাবে নিঃস্ব প্রায় সকল পেশার মানুষ। দীর্ঘ লকডাউনের কারনে সকল পেশা মানুষ আজ দিশেহারা প্রায়। তারই ধারাবিহকতায় সমগ্র মহানগরী জুড়ে পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব। করোনার প্রভাবে জীবন জীবিকার তাগিদে অনেক ব্যবসায়ী নিজস্ব ব্যবসা বন্ধ রেখে হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীতে।
দৌলতপুর মনির ডেকোটরের মালিক মনির হোসেন নি¤œ আয়ের একজন মানুষ। সরকার সকল প্রকার সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা পর থেকে তার ডেকোটরের দোকানটি সর্ম্পূন বেহাল দশায় পড়ে আছে। নেই কোন আয় ফলে তার পরিবারটি অসচ্ছল হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বর্তমান সময়ে কোন ব্যবসা না থাকায় তার ঘরের ভাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে দৌলতপুর ছেড়ে নিজ বাড়ি দেয়ানার অজোর পারা গাঁ গিয়ে ওঠতে হয়েছে, যা ডেকোরেটর ব্যবসার জন্য বেমানান। মনির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ত্রাণ পেলেও সচ্ছলভাবে চলতে পারছি না। তাই পরিবারের ভরণ-পোষনের জন্য ডেকোটরের দোকানটিতে ভ্রাম্যমান পেশা হিসাবে অন্য ব্যবসা করছি। এতে যা আয় হয় তাই দিয়েই পরিবারের দু’মুঠো মোটা ভাত তুলে দিতে পারবো।
৫নং ঘাট এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফা। জমানো টাকা দিয়ে সাজানো গোছানো ফাস্ট ফুডের দোকান গড়ে তোলে। করোনা প্রকোপ আর দীর্ঘ লকডাউনের কারণে নদীর পাড়ে আগের মতো আর ভিড় হয়না। প্রশাসনের লোক ভিড় হতে দেয় না। তার ব্যবসায় ধস নেমেছে। বর্তমানে চলতে খুব কষ্ট হয়। বুকে চাপা কষ্টের কথা কাউকে বলা যায় না।
বৈকালী বাজারেয় ফুটপাতের একজন কসমেটিক্স ব্যবসায়ী। দীর্ঘ লক ডাউনের কারণে বাজারে তেমন কাস্টমার ভেড়ে না, তাই অবশেষে সবকিছু ছেড়ে ভ্যান নিয়ে নেমেছে কাঁচা সবজি বিক্রয়ের উদ্দেশে।
আলম নগর বকুল তলার বাসিন্দা রুম্মান শেখ। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। আজ দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর তার কোন কাজ নেই। কাঠের কাজের উপর মানুষের কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে যে সম্পূর্ণ বেকার। তাই অবশেষে কাঠের কাজ ছেড়ে জীবন জীবিকার তাগিদে আজ সে রং মিস্ত্রি। আলামিন জানান, বাড়ীতে ছোট্ট বাচ্চা আছে, আছে বাবা, মা, বাবা, স্ত্রী। তাদের ভরণ-পোষণ চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। কারন কোন কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে রংঙের কাজ করছি, জীবন তো চালাতে হবে। সজিব নামের এক দোকানের কর্মচারী বলেন, করোনার কারনে দোকান মালিক কাজ করাচ্ছে না। কাজের অভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছি। তাই পরিবারের ভরণ-পোষনের জন্য ভ্রাম্যমান পেশা হিসাবে তরকারী বেঁচা-কেনা করছি। এভাবে নগরীকে করোনার প্রভাবে জীবন জীবিকার তাগিদে কয়েক শতাধিক ব্যবসায়ী নিজস্ব ব্যবসা ছেড়ে করছে ভ্রাম্যমান ব্যবসা। তাদের একটাই প্রত্যাশা সরকার এ করোনার সংকট মুহূর্তে তাদের পাশে মানবিক সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেবে, যার কারণে তারা ফিরে পাবে তাদের পুরানো সেই সাজানো গোছানো প্রতিষ্ঠানগুলো এমনই আশা অনেকেই।