ঊষার আলো ডেস্ক : মাহেন্দ্র গাড়ির যাত্রী নামানোর মত তুচ্ছ ঘটনার সূত্র ধরে বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হলে তার প্রতিবাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি রুটে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকাল থেকেই বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর জেলার ৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ ও পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এ ধর্মঘটের কারণে ঝালকাঠি-বরিশাল, ঝালকাঠি-ভাÐারিয়া, বরিশাল-খুলনা, বরিশাল-পিরোজপুর, বরিশাল-মঠবাড়িয়া ও বরিশাল-পাথরঘাটার এ ছয় রুটের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার অনেকেই গন্তব্যে যেতে না পেরে ফিরে গেছেন। অবশ্য কেউ-কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে গন্তব্যে গেছেন।
বাস মালিক সমিতির বরিশালের সভাপতি ইমান আলী কালু এ প্রতিবেদককে বলেন, সড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বরিশাল থেকে ঝালকাঠি রুটে বেশকিছু থ্রি-হুইলার মাহেন্দ্র চলাচল করছে। গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি থ্রি-হুইলারের চেক বসালে বরিশালের রূপাতলীর বাসিন্দা সুমন মোল্লার মহেন্দ্র থেকে যাত্রী নামিয়ে রাখে। সেই সূত্রের জের ধরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকালে ঝালকাঠি রুটের সব বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে সুমন মোল্লা। তারই প্রতিবাদে ঝালকাঠি মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আমরা রূপাতলী বাস মালিক সমিতি এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছি।
রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, সুমন মোল্লার অরাজকতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এই হামলাকারীকে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত ও সড়ক থেকে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
তবে অভিযুক্ত সুমন মোল্লা জানান, মালিক সমিতির লোকদের কেউ মারধর বা হামলা করেনি। উল্টো তারাই আমাদের মহেন্দ্র শ্রমিকদের মারধর করেছে, গাড়ি আটক করে রেখেছে। এর প্রতিবাদে মহেন্দ্র শ্রমিকরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ঝালকাঠির একটি বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির মারের শিকার মহেন্দ্র চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি রুটের সর্বশেষ বাস বিকাল সাড়ে ৬টায় রূপাতলী থেকে ছাড়ে। আমি রূপাতলী থেকে সন্ধ্যা ৭টায় একজন রোগী নিয়ে রাজাপুরের মিরেরহাটের দিকে রওনা হই। সাড়ে ৭টার দিকে ষাটপাকিয়া স্থানে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির লোকজন মহেন্দ্র থামিয়ে দিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়। এ সময় তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মারধরও করে।
নজরুল বলেন, শুধু আমি না এমন আরও অনেকের সাথে অত্যাচার করে বাস মালিক সমিতি। তাই আমরা এর প্রতিবাদে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকে ঝালকাঠি রুটের একটি বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এছাড়া আর কিছু করিনি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহাসড়কে বাস চলাচলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা না দেয়া পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে। রূপাতলীতে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বাস শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে, গাড়ির হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাটারি খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় ৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বেআইনি হলেও ঝালকাঠির আঞ্চলিক মহাসড়কে পুরোদমে চলছে অবৈধ মহেন্দ্র ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এর প্রতিবাদ করলে মহেন্দ্র মালিক ও চালকরা বিভিন্ন সময় বাস শ্রমিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও যন্ত্রাংশ চুরি করে নেয়।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন মাহমুদ বাচ্চু বলেন, রূপাতলীর সুমন মোল্লা নামে এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে আমাদের বাস ভাংচুর এবং শ্রমিকদের মারধর করা হয়। আমরা সুমন মোল্লার বিচার এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারসহ সব সরকারি দায়িত্বশীলদের কাছে আবেদন করেছি। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী বলেন, বিষয়টির সঙ্গে বরিশাল রূপাতলী বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিকরা জড়িত। তাই বিভাগীয় কমিশনার এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে একটা মীমাংসার চেষ্টা করছি।
(ঊষার আলো-এমএনএস)