ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি ডজনখানেক বহুতল ভবন, জমি-জায়গা ও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। মাত্র পাঁচ বছরে কাউন্সিলর ফারুক কিভাবে প্রায় দুই শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, কাউন্সিলর হয়ে ওমর ফারুক যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। অসহায় মানুষের জমি দখল, বিচার সালিসির নামে ব্যবসা করেছেন তিনি। এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে ইট-বালু সিমেন্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তার লোকদের দিতে হয়। অন্যথায় হামলা, মামলাসহ গুনতে হয় বড় অঙ্কের চাঁদা।অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় তিন শতাংশ জমিতে ছয় তলা ভবন রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা।
একই এলাকায় বদরুজ্জামান, মনির হোসেন ও শাহজামালের মালিকানাধীন দুই কাঠা জমি কৌশলে কম দামে ক্রয় করে দুই তলা ভবন নির্মাণ করছেন ওমর ফরুক, যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। পাইনাদি আবদুল লতিফ মসজিদের পাশে সাড়ে পাঁচ কাঠা জমি। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা। এই জমি দখল করতে গিয়ে জমির মালিক দাবিদার মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে মাছুম মিয়াকে মারধর করেন কাউন্সিলরের লোকজন। একই এলাকায় সামসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে দশ কাঠার একটি প্লট রয়েছে ওমর ফরুকের, যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন দশ কাঠা জমি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরো অনেক জায়গায় জমি রয়েছে তার। অনেক জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুবাই ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে কাউন্সিলর ফারুকের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ওমর ফারুকের সহযোগী আক্তার হোসেন, তারেক মিয়া, সোহরাব হোসেন বাবুল, নুর হাবিব, জাহাঙ্গীর হোসেন, রুবেল মিয়া, মাদক ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন, তারেক রহমানসহ প্রায় ২০-২৫ জনের একটি শক্তিশালী বাহিনী পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। পাইনাদি এলাকার বাসিন্দা আবুল বাসার পাটোয়ারী জানান, বাড়ি নির্মাণ করার সময় আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন কাউন্সিলর ও তার লোকজন।
দুর্নীতি দমন কমিশন তার পাঁচ বছরের সম্পদের হিসাব দেখলেই বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক জানান, নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিপক্ষের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কিভাবে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশির ভাগ সম্পদই আমার বাপদাদার আমলের। আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক মশিউর রহমান জানান, কাউন্সিলর ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা শিগগিরই মাঠে নামছি।