UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আল কায়েদার শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরি যে কৌশলে …

koushikkln
আগস্ট ২, ২০২২ ১১:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

উষার আলো ডেস্ক : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে নিহত হওয়ার পর আল কায়েদার জন্য এটি অনেক বড় একটি ধাক্কা। সূত্র : অনলাইন

বহু বছর পশ্চিমা গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে লুকিয়ে ছিলেন জাওয়াহিরি। তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার এই ঘটনা সন্ত্রাসবাদবিরোধী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘সতর্কতার সঙ্গে ধৈর্য্য ধারণ ও দৃঢ়’ কাজের ফল বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগ পর্যন্ত জাওয়াহিরি পাকিস্তানের উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা অথবা আফগানিস্তানে লুকিয়ে আছেন বলে গুজব শোনা গিয়েছিল।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জাওয়াহিরিকে হত্যা অভিযানের বিষয়ে যেসব বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
তার বর্ণনা অনুসারে, কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দানকারী একটি নেটওয়ার্কের বিষয়ে সজাগ ছিল। কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার পর গত এক বছর ধরে আফগানিস্তানে আল কায়েদার উপস্থিতির ইঙ্গিতগুলোর ওপর নজর রাখছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। চলতি বছর গোয়েন্দা কর্মকর্তারারা আফগানিস্তানে জাওয়াহিরির পরিবারকে শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন আল কায়েদা নেতার স্ত্রী, তার কন্যা ও নাতি-নাতিনরা। তারা কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে বাস করতেন। পরে ওই বাড়িতেই জাওয়াহিরির উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
কয়েক মাসের মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও নিশ্চিত হন যে, তারা কাবুলের ওই বাড়িতে জাওয়াহিরিকে সঠিকভাবেই শনাক্ত করেছেন। এপ্রিলের প্রথমদিকে তারা মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাতে শুরু করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুল্লিভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিষয়টি জানান।

তথ্য প্রদানকারী ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘একাধিক স্বাধীন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে আমরা (তার) জীবনযাপনের একটি ছক তৈরি করতে সক্ষম হই।’
জাওয়াহিরি একবার কাবুলের ওই বাড়িতে আসার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেখান থেকে তার চলে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হতে পারেননি। পরবর্তীতে একাধিকবার তাকে বাড়িটির বারান্দায় দেখতে পাওয়া যায়। আর সেখানেই তাকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলাটি হয়েছিল।
কর্মকর্তারা এক পর্যায়ে ওই ভবনের কাঠামো ও নিরাপদ আস্তানাটির ধরণ সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করেন যাতে এটি কোনো হুমকি তৈরি না করে এবং বেসামরিক ব্যক্তি ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে আল-কায়েদা প্রধানকে হত্যা করতে অভিযান চালানো যায়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গোয়েন্দা তথ্যগুলো যাচাই ও পদক্ষেপ নেওয়ার সেরা উপায় নিয়ে আলাপ করতে প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ১ জুলাই হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এর পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা একটি সম্ভাব্য অভিযানের বিষয়ে বাইডেনকে অবহিত করেন। ওই বৈঠকে বাইডেন ‘আমরা কীভাবে জেনেছি, কী কী জেনেছি, সেই বিষয়ে বিশদ প্রশ্ন করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৈরি করা ওই নিরাপদ আস্তানার একটি মডেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। কাবুলে হামলা চালালে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও বিশ্লেষণ করার অনুরোধ করেছিলেন বাইডেন।

আন্তঃসংস্থা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ছোট একটি দল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখে জানান, আল কায়েদার নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে জাওয়াহিরি হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু।

২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ের জন্য মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্যদের ও উপদেষ্টাদের ডাকেন। জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হলে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। বৈঠকে থাকা অন্যান্যদের মতামত নেওয়ার পর বাইডেন বেসামরিকদের নিহত হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্নে রাখার শর্তে ‘এটি সুনির্দিষ্ট উপযোগী বিমান হামলার’ অনুমোদন দেন। গ্রিনিচ মান সময় ৩০ জুলাই রাত ১টা ৪৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে দুটি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়।