UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এবার তাইওয়ান ঘিরে চীন-মার্কিন উত্তেজনা

koushikkln
আগস্ট ৩, ২০২২ ১১:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর শেষ করার কিছু পরই দেশটির স্বঘোষিত আকাশ-প্রতিরক্ষা সীমার ভেতরে ঢুকেছে ২৭টি চীনা যুদ্ধবিমান।

এর আগে চীন ঘোষণা করে – তাইওয়ানের চার দিকে মোট ছয়টি জায়গায় তারা তাজা গোলাবারুদ ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তিন দিন ধরে এক সামরিক মহড়া চালাবে।  সূত্র : বিবিসি বাংলা 

মহড়াটি শুরু হবার কথা বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট)। তবে তার আগেই ২৭ চীনা বিমানের তাইওয়ানের আকাশে ঢোকার ঘটনা ঘটলো। এর মধ্যে ২২টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করে। এগুলোকে সাবধান করতে তাইওয়ানও তাদের জেট ওড়ায়।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তার তাইওয়ান সফর শেষ করে আজ তাইপে ছেড়েছেন। তিনি যেন এ সফরে না আসেন সে জন্য চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দেবার পর এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।

চীন তাইওয়ানকে তার নিজের অংশ বলে মনে করে, এবং বিভিন্ন সময় তারা “প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও” দ্বীপটিকে পুনর্দখল করার কথা বলেছে। কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে।
তাইওয়ানে মিজ পেলোসির এই সফরের জবাবে চীন বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন ধরে দ্বীপ রাষ্ট্রটির চার দিকে সামরিক মহড়া চালাবার কথা ঘোষণা করেছে।

তাইওয়ানকে ঘিরে সাগরের ছয়টি জায়গায় তাজা গোলাবারুদ,এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এ মহড়া হবে এবং তা রোববার পর্যন্ত চলবে।
বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, যে ছয়টি এলাকায় এই চীনা মহড়া চলবে তার তিনটি পড়েছে তাইওয়ানের উপকুল থেকে ১২ মাইলের সমুদ্রসীমার ভেতরে – এবং এ ব্যাপারটি নজিরবিহীন।

তাইওয়ান বলেছে – এটা হবে তার আকাশ ও সমুদ্রসীমায় চীনের অবরোধ আরোপের শামিল, এবং জাতিসংঘের কনভেনশনের লংঘন।
বিবিসির সংবাদদাতা রুপার্ট উইংফিল্ড-হেইস বলছেন, এ মহড়া থেকে একটা বড় সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
যদি ১২-মাইল জলসীমার ভেতরে চীনের রণতরী বা বিমান ঢোকে – তাহলে তাইওয়ান একে আগ্রাসন হিসেবে দেখতে পারে এবং ভাবতে পারে যে নিজস্ব জলসীমা রক্ষার জন্য তাকে কিছু একটা করতে হবে।

তিনি জানাচ্ছেন – মার্কিন নৌবাহিনী পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছে এবং তাদের বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যানের ‘ব্যাটল গ্রুপ’ এখন ফিলিপিন সাগরের একটি কাছাকাছি এলাকার দিকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে চীনের বিমানবাহী জাহাজের ব্যাটল গ্রুপটিও তাইওয়ান প্রণালীর দিকে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিবিসির সংবাদদাতা জশুয়া চিটহ্যাম এ প্রশ্ন করেছিলেন লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক স্টিভ স্যাং-কে। তিনি বলেন, একেবারে এক্ষুণি যুদ্ধ বেধে যাবার সম্ভাবনা কম।
“চীনাদের এখনো সেই সক্ষমতা হয়নি যে তারা তাইওয়ান নিয়ে নেবে, আমেরিকানদের মোকাবিলা করবে এবং তারা যে জিতবেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত বোধ করবে। ” বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল ও’হ্যানলন বলেন, সরাসরি যুদ্ধ কারো স্বার্থেরই অনুকুল হবে না।
তবে তিনি বলেন, “এরকম কোন যুদ্ধ কোনদিকে মোড় নেবে তা কেউ বলতে পারে না, এটা খুব সহজেই বৈশ্বিক চেহারা নিয়ে নিতে পারে, পারমাণবিক হুমকিও তৈরি হতে পারে।”
মি. ও’হ্যানলন বিবিসিকে বলেন, “চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ, কিন্তু রাশিয়ার মত গুরুতর হুমকি নয়।”
তার কথা, ভ্লাদিমির পুতিন এটা দেখিয়েছেন যে তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে বিরাট ঝুঁকি নিতে পারেন – কিন্তু “আমার মনে হয়না তাইওয়ানের ব্যাপারে একান্ত বাধ্য না হলে চীন সেরকম কোন পথ নেবে ।”

ন্যান্সি পেলোসি তার তাইপে সফরের সময় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইংওয়েনের সাথে বৈঠক করেন। এসময় তিনি তাইওয়ানের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন এবং বলেন, তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার অবিচল থাকবে।
প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন বলেন, তার দেশের প্রতি চীনের সামরিক হুমকি বাড়ছে, কিন্তু তাইওয়ান পিছিয়ে যাবে না।

মিজ পেলোসি তাইপেতে চীন, হংকং ও তাইওয়ানের অধিকার কর্মীদের সাথেও বৈঠক করেন। প্রেসিডেট সাই মিজ পেলোসিকে তাইওয়ানের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাও দেন।
এ সফর শুরুর আগে মিজ পেলোসি যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত এক-চীন নীতির প্রতিও তার সমর্থনের কথা বলেছিলেন।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, চীনের হুমকি ও বাগাড়ম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ভীত হবে না। তিনি আরো বলেন, চীন তাইওয়ানের সাথে অর্থনৈতিক সংঘর্ষে জড়াতে পারে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক নির্ভর করবে চীনের ভবিষ্যৎ আচরণের ওপর।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই ন্যান্সি পেলোসির এ সফরকে ‘এক প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করে অভিযোগ করেন – তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সার্বভৌমত্ব লংঘন করছে।
তার এ সফরের প্রতিবাদ জানাতে বেইজিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তা ছাড়া তাইওয়ান থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন।

চীনা সরকারি কূটনীতিক থেকে শুরু করে বেশ কিছু সাংবাদিক ও ভাষ্যকারও তাদের টুইট বার্তায় ন্যান্সি পেলোসির এ সফরের কড়া নিন্দা করছেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২রা আগস্ট টুইট করেন যে “যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ১৪০ কোটি চীনা জনগণের শত্রুতে পরিণত করছে, এবং এর পরিণতি ভালো হবে না।”

গ্লোবাল টাইমসের সাবেক প্রধান সম্পাদক হু শিজিন গত সপ্তাহে মন্তব্য করেছিলেন, চীনা সেনাবাহিনীর অধিকার আছে ন্যান্সি পেলোসির বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার। এর পর তার টুইটার একাউন্টটি সাময়িকভাবে লক হয়ে গিয়েছিল।
এখন তিনি বলছেন, চীনের সামরিক মহড়ার কারণে তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো কার্যত লকডাউন হয়ে যাচ্ছে – এবং মিজ পেলোসির সফরের পরিণাম হচ্ছে এটাই।