UsharAlo logo
রবিবার, ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুবিতে বেপরোয়া ছাত্রলীগ

ঊষার আলো
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বেপরোয়া ছাত্রলীগ। হল দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য তথা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রায়ই রক্তাক্ত হচ্ছে ক্যাম্পাস। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-দিন যত যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আরও বেশি সহিংস হয়ে উঠছে। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সহিংসতায় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন-ছাত্রলীগের এহেন কর্মকাণ্ড থেকে কবে মুক্ত হবে কুবি? নাকি দিনদিন তাদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে? কবে ফিরে আসবে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ? এদিকে দুদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, ‘রাজনীতি’মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা দিয়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের শতচেষ্টার পরও এ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। সরকারি দলের সংগঠন ছাত্রলীগ প্রথমে কুবিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। এরপর থেকে নানা অঘটন ঘটিয়ে চলেছে সংগঠনটি। আধিপত্য বিস্তারের জেরে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শনিবার দুপুরেও একইভাবে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ পরিস্থিতিতে রোববার ও আজ সেমিস্টার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-ছাত্রলীগের সহিংস কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিগত দিনগুলোয়ও ভিসিকে অবরুদ্ধ, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী লাঞ্ছিত, সাংবাদিক মারধর, সহপাঠীকে গুলি করে হত্যা, নিরীহ ছাত্রদের ওপর হামলাসহ অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা না নিলে ক্যাম্পাসে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

শুক্র ও শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ মকছেদুর রহমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান রবিউল আউয়াল চৌধুরী, বাংলা বিভাগের প্রধান ড. জিএম মনিরুজ্জামান, ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক ড. মো. হবিবুর রহমান ও প্রক্টর কাজী ওমর ছিদ্দিকী। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কতিপয় শিক্ষক, কুবি প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নেপথ্যে থেকে এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যার সব দায় কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে আমার ওপর বর্তাচ্ছে। হল ছাত্রলীগের এমন সহিংসতার দায় আমরা নিতে চাই না। সহিংসতায় জড়িতদের নামের তালিকা আমরা কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দেব। তাদের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে কুবিতে রক্তপাত বন্ধ হবে।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, কুবিতে সব ধরনের সহিংতা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে।

কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, শুক্র ও শনিবারের সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ভিসি বলেন, আমি ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে নই। তবে যে রাজনীতি ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরাবে, হানাহানি ঘটাবে এমন ছাত্ররাজনীতি চাই না।’

ঊষার আলো-এসএ