UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দক্ষিণাঞ্চলে ১০লাখ আমন চাষীর উৎপাদন খরচ বাড়বে

koushikkln
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ ৬:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের আমন চাষীরা বীজতলা তৈরী করে। ভরা মৌসুমে সারের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বৃদ্ধি ও সেচের জন্য ডিজেল ব্যবহার করায় সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।হেক্টর প্রতি এবারের উৎপাদন খরচ দাড়াবে ৮ হাজার টাকা।গত বছর প্রতি হেক্টর উৎপাদন খরচ ছিল ৬ হাজার টাকা।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবারের মে মাসে ৯৬ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ২০২০ সালে একই মাসে ১৯০ মি.মি, ২০১৯ সালে ৫৮ মি.মি, ২০২১ সালে ৮২ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মে মাসে এ অঞ্চলর তাপমাত্রা ৩৭-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। ফলে আমন ক্ষেতে রোপনের জন্য ও বীজতলা তৈরির জন্য ট্রাক্টর ব্যবহারের উপযোগী হয়নি।সে কারণে মে মাসে এবারের আমনের বীজতলা হয়নি।

চালের ঘাটতি পূরণের জন্য কৃষি সম্পৰসারণ অধিদপ্তর আমন ও বোরোকে গুরুত্ব দেয়।এবারের মে মাসে বোরো ওঠার মণ প্রতি ৮০০ টাকা দাম হওয়ায় কৃষক হতাশ হয়।সেচের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় প্রত্যাশিত আউশ উৎপাদন হয়নি।এ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৩৮ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে।অনাবৃষ্টির কারণে পাট পঁচানো সম্ভব হয়নি।এ মৌসুমে চিত্রা,ভৈরব,কপোতাক্ষ, গ্যাংরাইল, শৈলমারি, ভদ্রা নদীর নোনা পানি দিয়ে পাট পঁচিয়ে ফল হয়েছে বিপরীত। এখানেও কৃষক বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে।নতুন পাটের রং বিবর্ণ হওয়ায় গতবারের তুলনায় দাম অর্ধেকে। গত বছর  মণ প্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হলেও গত মাসে পাট ২২’ শ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

বর্ষা ও শরৎ কালের প্রথমার্থে বৃষ্টির দেখা মেলেনি।টানা খরা ও দাবদাহে লাল হয়েছে আমনের বীজতলা।রবি ও সোমবারে এক পশলা বৃষ্টিতে আমন ক্ষেতের সতেজতা আসেনি।আমন  বাচাঁতে দক্ষিণাঞ্চলে জেলা গুলোতে ৫৫ হাজার সেচ যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ জমি সেচের আওতায়।দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা,সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল।
মে মাসের অনাবৃষ্টির কারণে বীজতলা হয়নি।জুনের শেষ দিকে বীজতলার কাজ শুরু হয়।সে কারণে আমন  রোপন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বাড়িয়ে দেয়া হয়।গেল বছরের জুন মাসে ৩০২ মি.মি, জুলাই মাসে ৩৫৫ মি.মি, আগষ্ট মাসে ১৭১ মি.মি ও সেপ্টেম্বর মাসে ২৭৯ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।এ বছরের জুন মাসে ৮৫ দশমিক ৩৩ মি.মি, জুলাই মাসে ১০৭দশমিক ৩৮ মি.মি, আগষ্ট মাসে ১৭১ দশমিক ৭১ মি.মি ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম ১১ দিনে ২৫ দশমিক ৩২ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলে এ পর্যন্ত ৮২ শতাংশ আমন  আবাদ হয়েছে।আবাদের শেষ সময়সীমা ছিল ৩০ আগষ্ট।কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আবাদের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গত বছর আগষ্ট পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ আমন আবাদ শেষ হয়।অনাবৃষ্টির কারণে উল্লিখিত চার জেলায়  ৫৫ হাজার ১৮১ টি সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে রোববার মহাপরিচালক দপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে সম্পূরক সেচ দেয়া হচ্ছে। উল্লিখিত চার জেলায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়।খরার কারণে আউশের আবাদ ব্যাহত হয়। এবারের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে এসব জেলায় ২ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে তিল, ১২’শ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল,৩লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনাঞ্চলে অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ ফজলুর হক বলেছেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমন আবাদে বিলম্ব হয়।নড়াইল জেলায় শতভাগ জমিতে আবাদ  হয়েছে। রবি ও সোমবারের বৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সতেজতা আসার কথা।বাগেরহাট উপজেলা সদর,রামপাল,শরণখোলা, সাতক্ষীরা জেলা সদর,কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় বৃষ্টিপাতের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। অধিদপ্তরের বাগেরহাটস্থ উপপরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন,জেলায় শতভাগ জমিতে খুব শীঘ্রই আমন আবাদ শেষ হবে।

উল্লেখ্য, চার জেলায় ৯লাখ ৫৮ হাজার মহাজন, মাঝারি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষী অনাবৃষ্টি কারণে উদ্বিগ্ন ছিল। আমন আবাদে সেচ যন্ত্র ব্যবহার হওয়ার ফলে ডিজেলের দাম বাড়ায় আমন উৎপাদন খরচ বাড়বে বলে খুলনার ডুমুরিয়া কৃষকরা জানিয়েছেন।