UsharAlo logo
বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ: কৃষকের স্বস্তি

koushikkln
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ ১১:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : লঘু চাপের প্রভাবে টানা দুইদিন ভারী বৃষ্টিপাতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। তবে দীর্ঘ প্রতিক্ষারপর টানা বৃষ্টি পাতের কারণে আমন চাষীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে মুসলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যা বিরামহীনভাবে সোমবারও অব্যাহত থাকে। এতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম কিছুটা ব্যাহত হলেও পরিবেশ প্রকৃতি ও কৃষির জন্য এ বৃষ্টিকে আশির্বাদ হিসেবে দেখছে সবাই।

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে গত দুই দিনের মতো আগামী দুই দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ও বুধবার এই লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসতে পারে। এদিকে এই লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চার সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের দ্বীপ ও চরগুলোতে ১ থেকে ২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে লঘু চাপের প্রভাবে এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এলাকায় ঝুঁকি বেড়েছে। পৌর বাজারে প্রবেশ করেছে জোয়ারের পানি। অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার আশংকায় নেট-পাটা অপসারণ করা হয়েছে।

পাইকগাছার গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু জানান, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতার আশংকা রয়েছে, এ জন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের নেটপাটা অপসারণ করে পানি সরানো ব্যবস্থা করেছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বছর বৃষ্টি না থাকায় আমন রোপন পিছিয়ে গেছে। এখনো ৪০ ভাগ রোপন কাজ চলমান রয়েছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে আমন চাষাবাদ অনেক ভাল হবে এবং আমন উৎপাদন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল সেটি অনেকটি কাভার হবে বলে আশা করছি।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী দুই দিন এই আবহাওয়া বিরাজ করবে। মূলত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি কমে এলেও মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয় থাকায় দেশে কোথাও কোথাও থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।’

সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বলা হয়, ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়— রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল, অন্ধ্র প্রদেশ, উড়িষ্যা ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। লঘুচাপ ও মৌসমি বায়ুর প্রভাবে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।