আরিফুর রহমান, বাগেরহাট : বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাত ও জোরপূর্বক ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে শুক্রবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল আহমেদ বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ ও সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল আহমেদ বলেন, কচুয়া উপজেলার টেংড়াখালি (খাদ্য গুদামের পাশে) গ্রামের সালাম শেখের ছেলে সবুজ শেখ (৩০) আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। বন্ধুত্বের সুবাদে সবুজের পরামর্শে কচুয়ার মীর মার্কেটে জুতার ব্যবসা শুরু করি। ঢাকাতে অন্য ব্যবসা থাকায় সবুজ কচুয়ার শোরুম পরিচালনা করত। ব্যবসা ও বন্ধুত্বের সূূেত্র আমার স্ত্রী বিউটির সাথে সবুজের ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সূত্র ধরে সবুজ ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন (২২) আমার স্ত্রী বিউটি বেগমকে কুমিল্লা জেলার বড়ুয়া উপজেলার মহেশপুর গ্রামের আলি আশরাফের ছেলে জুয়েল রানার সাথে ভাগিয়ে দেয়। সবুজ ও সবুজের স্ত্রী আসমা খাতুনের যোগসাজগে দুটি শিশু সন্তান রেখে আমার স্ত্রী চলে যায়। যাওয়ার সময় বাসায় থাকা নগদ ৭ লক্ষ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্নালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সাথে সবুজ ও তার স্ত্রী গা ঢাকা দেয়। সবুজ আমার শোরুম ও ব্যবসার অন্তত ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। উপয়ান্তুর না পেয়ে সবুজ, সবুজের স্ত্রী ও জুয়েলের নামে মতিঝিল থানায় মামলা করি। মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজ আমাকে হুমকী-ধামকী দিতে থাকে। মামলা উঠিয়ে না নিলে আমাকে জীবনে মেরে ফেলারও হুমকী দেয় সবুজ। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টে¤\^র) দুপুরে সবুজের হুকুমে জনৈক কাইয়ুমসহ ১০-১২ জন লোক আমাকে শো-রুম থেকে তুলে নিয়ে কচুয়া থানার ভিতর যায় এবং আমাকে হুমকী-ধামকী দেয়াসহ মারধর করে। পরে কোন মামলা না থাকায় কচুয়া থানার ওসি আমাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তখন সবুজের লোকজন আমাকে আবার শোরুমে নিয়ে যায়। শোরুম থেকে আমার রুপালী ব্যাংক, কচুয়া শাখার ২৮৭৩০২০০০০৮১৩ নং হিসাবের চেকবইসহ কচুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শেখ সুমনের অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শেখ সুমনের সামনে জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ১৮টি চেকে মোট ২১ লাখ টাকা লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। একটি স্টাম্পে আমার কাছে টাকা পাবে এমন চুক্তি করে নেয় এবং আমার সেলসম্যান ইমরানের কাছে থাকা তার মায়ের নামের ৫ শতক জমির দলিল কেড়ে নেয় তারা। ওই জমি দখলে নেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। এসব ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে শোরুমে পাঠিয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলার খাদিম নগর উপজেলার বহর গ্রামের আফসার আলী শেখের ছেলে এবং কচুয়া উপজেলার সদরের মীর মার্কেটে জেমিস জুতার শোরুমের মালিক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী সোহেল সেখ ব্যবসার সুবাদে বেশকিছুদিন কচুয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাগেরহাটের কচুয়া ব্যবসা করতে এসে স্ত্রী ও টাকা হারিয়ে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছি বলে সংবাদ সম্মেলনে কেঁদে ফেলেন সোহেল শেখ। এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও কচুয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ সুমন সাংবাদিকদের বলেন, জোর করে ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। মোঃ সোহেল আহমেদ কচুয়া বাজারের একজন ব্যবসায়ী। তার কাছে সিলেটের লোকজন টাকা পাবে, সেই টাকা প্রদানের জন্য সোহেল তাদেরকে চেক প্রদান করেছে। আমরা শুধু ঘটনার স্বাক্ষীমাত্র।
কচুয়া থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের লোকজন কচুয়া বাজার কমিটির লোকজনসহ মোঃ সোহেল আহমেদকে থানায় নিয়ে আসছিল। যখন দেখেছি, এটা আমাদের থানার বিষয় না। তখন তাদেরকে চলে যেতে বললে তারা চলে যায়।