UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার প্রকৃত রহস্য অধরা

koushikkln
নভেম্বর ১৪, ২০২২ ১১:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : সাত দিনে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ও নির্মম হত্যাকাÐের শিকার ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের প্রকৃত রহস্য উম্মোচিত হয়নি। এ ঘটনায় একমাত্র গ্রেফতার ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গোয়েন্দারা বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। বুশরা ঘটনার আগে রামপুরা এলাকায় ফারদিনের সঙ্গে রিকশায় থাকলেও নেমে যাওয়ার কথা বলছেন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না বলে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে জানিয়েছেন।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যায় এখনও অকাট্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে নৌ পুলিশের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো অকাট্য প্রমাণ সহকারে কোনো তথ্য আসেনি। (আসলে) আপনাদের জানানো হবে।
মাদকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা এখনই কিছু বলতে পারছি না।

নিখোঁজের দুই দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ থেকে পুলিশের ধারণা ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা নূরউদ্দিন ৯ নভেম্বর মধ্যরাতে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আসামি রিমান্ডে আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই তার ব্যাপারে পাওয়া তথ্য গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ঘটনার পর থানা পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ফারদিন হত্যার তদন্তে মাঠে কাজ করছে। নিজস্ব সোর্স, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ঘটনার বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে। তারই অংশ হিসেবে ফারদিন মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে হত্যাকাÐের শিকার হয়েছে বলে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারদিনের সঙ্গে বুশরা ছাড়া অন্য কোনও মেয়ের সম্পর্ক আছে কিনা বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ফারদিনের সম্প্রতি ডিবেটিংয়ের জন্য স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে যাওয়ার কথা ছিল। ডিবেটিং নিয়ে কারও বিরাগভাজন হয়েছিলেন কিনা, তারও তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়াও পারিবারিক কোনও সমস্যা কিংবা কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল কিনা- এ বিষয়টিও সন্দেহে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এসব বিষয় নিশ্চিত হতে নিহতের পরিবারের আরও সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ফারদিনের বাবা নুরউদ্দিন রানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি চাই তদন্তে ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসুক। কেননা আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সে কোনোদিন মাদক সেবন করেনি। পাশাপাশি মাদকের যে অভিযোগ উঠছে, তা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমার ছেলে বাসায় থেকে পড়শোনা করতো। সে হলে থাকতো না। এ কারণে সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা খোঁজখবরও রাখা আমাদের জন্য খুব সহজ ছিল। বাবা-মা এবং ছোট ভাই বোনদের নিয়ে হাসিখুশিতে থাকতো। তার মুখে আমি সিগারেটও দেখিনি। তাহলে কীভাবে সে মাদক সেবন করে, কোন উদ্দেশে এ ধরনের তথ্য ছড়ানো হচ্ছে?
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এ খবরে তার পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারদিনকে শনাক্ত করে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনার তিন দিন পর ফারদিনের বাবা রানা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নিহতের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

ইতোমধ্যে মামলাটি সুষ্ঠু ও দ্রæত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে বুশরাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা।