যশোর প্রতিনিধি : যশোর শহরের শংকরপুরের বাসিন্দা আনোয়ার জাহিদ (৩৫) নামে এক যুবককে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মালয়েশিয়ায় থাকা শ্বশুর বাড়ির লোকজন এই খুনের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার।
গত সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকালের পর যেকোনও সময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মালয়েশিয়া পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
নিহত আনোয়ার জাহিদ যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে।
পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আনোয়ার জাহিদ যশোরের ঝিকরগাছার রাজাডুমুরিয়া গ্রামের গোলাম সরোয়ারের মেয়ে ঝুমুর খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। গত নয় বছর আগে তিনি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের প্ররোচনায় অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যান। এতদিন তিনি যা উপার্জন করেছেন তার সবটুকুই স্ত্রী ঝুমুর খাতুনের কাছে পাঠান।
একপর্যায়ে স্ত্রী ঝুমুর খাতুন বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করলে আনোয়ার জাহিদের সাথে তার দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। কলহের জের ধরে প্রায় ১৫ দিন আগে ঝুমুর খাতুন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান। যাওয়ার সময় মালয়েশিয়া থেকে আনোয়ার জাহিদের মরদেহ আসবে বলে হুমকি দেন।ঝুমুর চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর আনোয়ার জাহিদ মালয়েশিয়া থেকে ফোনে বাবা-মাকে জানান, তার শ্যালক আইয়ুবসহ শ্বশুর বাড়ির মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা লোকজন তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বাঁচানোর জন্য মা-বাবার কাছে আকুতি জানান। কিন্তু মা-বাবা পারিবারিক কলহ মিটে যাওয়ার আশায় বিষয়টি আমলে নেননি।
সর্বশেষ, সোমবার ভোরে আনোয়ার জাহিদ মা-বাবাকে জানান, তার শ্যালক আইয়ুব তাকে হত্যা করার জন্য দু’জনকে পাঠিয়েছে। তিনি আর বাঁচতে পারবেন না। দুপুরের দিকে ইসমাইল নামে একব্যক্তি মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে জানান, আনোয়ার জাহিদ আত্মহত্যা করেছেন। সাথে একটি ছবিও পাঠান। কিন্তু সেই ছবিতে আত্মহত্যা করার মতো কোনও আলামত দেখা যাচ্ছে না।
এরপর পরিবারের লোকজন মালয়েশিয়ায় থাকা পরিচিতজনদের ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা সেখানে গিয়ে কাউকে পাননি।
স্থানীয়রা তাদের জানান, আনোয়ার জাহিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে দেয় খুনিরা। খবর পেয়ে মালয়েশিয়া পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মঙ্গলবার বিকেলে আনোয়ার জাহিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, মালয়েশিয়া থেকে আনোয়ার জাহিদের মরদেহ দেশে আনতে এবং খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। একইসাথে যশোরের জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।