UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মার বুকে রাস্তার যান

usharalodesk
জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ ৭:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় গত কয়েক দশক ধরে ছোট হচ্ছে এক সময়ের সুবিশাল প্রমত্তা নদীর আয়তন। এ বছর শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সঙ্কট আরো বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই পানি ২৬ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। আর দ্বিতীয় সপ্তাহে কম দিয়েছে ৩০ হাজার কিউসেক। ফলে এবার চৈত্র মাসে একেবারেই পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কা জাগছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে সেচব্যবস্থা ও জিকে প্রকল্প। এই অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোতে পানি ওঠা বন্ধ হলে পানির চরম অভাব দেখা দিবে। সেই সাথে পদ্মা পানিশূন্য হলে নদীপাড়ের মৎস্যজীবীদের জীবনজীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

পদ্মায় এক সময় পাল তোলা নৌকা চলত, বড় বড় জাহাজ নোঙর ফেলত। বেশির ভাগ মালামাল আনা নেয়া হতো এই নদী দিয়ে। সেই নদী এখন মরা খালে পরিণত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর অনেক জায়গায় এখন নৌকার পরিবর্তে চলে ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান, অটোরিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন। নদীর বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুবোঝাই বিশাল ট্রাক। রাখালরা গরু চরাচ্ছে দলে দলে। চলছে চাষাবাদ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা সেই প্রমত্ত পদ্মা। এ পরিবর্তনের ফলে পদ্মার সাথে মিশে থাকা নদীপাড়ের মানুষের জীবন, জীবিকা আর পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দেয়ায় মৎস্যজীবীরা এখন কর্মহীন। অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন।

শামসুল মোল্লা নামের এক জেলে জানান, পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সারা দিন জাল ফেলে ২-৩ কেজির বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। উপার্জন না থাকায় অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে শহরে ভ্যান রিকশা চালাচ্ছেন। নৌকার মাঝি মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, এ বছর পানি কমে যাওয়ায় এক কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে নানান চর ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় লাগছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি তাড়াতাড়ি পানি কমে গেছে বলে তিনি জানান।

পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি না থাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ৫ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ ফুট নিচে রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে। এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে।

যৌথ নদী কমিশনের তথ্যানুসারে, চলতি জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৮৫ হাজার ৩১৬ কিউসেক। গত বছর এই সময় ওই পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় এক লাখ ১১ হাজার কিউসেক। অর্থাৎ জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পানি আরো কম পাওয়া যায়। যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, জানুয়ারির দ্বিতীয় ১০ দিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৭০ হাজার ৮২৭ কিউসেক। গত বছর একই সময়ে একই পয়েন্টে এক লাখের বেশি কিউসেক পানি পরিমাপ করা হয়েছিল।

এবার ভারতের পর্যবেক্ষক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশটির কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের (সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন) নির্বাহী প্রকৌশলী বসন্ত কুমার ও প্রকৌশলী দীপক কুমার। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আড়াই হাজার ফুট উজানে ঈশ্বরদীর সীমানা ঘেঁষে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পয়েন্ট থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে।

পানি পরিমাপক দফতর, হাইড্রোলজি পাবনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভারত এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বছরের প্রথম দিন থেকে পানি পরিমাপ করছে। এ বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ অনেক কম থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর শুরু থেকেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রায় ৩০ হাজার কিউসেক কম প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় কম পানি প্রবাহিত হলেও চুক্তি অনুযায়ী ঠিকমতোই বাংলাদেশ পানি পেয়েছে।