ঊষার আলো রিপোর্ট : ভেতো বাঙালি ভাত খাবে না এটা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। মাছে ভাতে বাঙালির পরিচয় বিশ্বব্যাপী। বাঙালি জাতি জন্মগতভাবে ভাতে অভ্যস্থ হলেও ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে হুমাইরা পারভীন (১৩) ও হাসিবুর রহমান রাহীর (১৮) বেলায়। শুধু ভাত নয়, ভাতের গন্ধ পেলেই বমি আসে তাদের।
হুমাইরা পারভীনের বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের হাসপাতাল পাড়া গ্রামে। মা বিথী আক্তার পেশায় গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে হুমাইরা বড়।সে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।তার বাবা হাসান আলী পেশা একজন এনজিও কর্মী।
অন্যদিকে হাসিবুর রহমান রাহি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পুরাতন স্টেশন পাড়ার মুদির দোকানদার আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ ও হাবিবা পারভীন দম্পত্তির বড় ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হুমাইরা ও হাসিব দুজনই জেদি প্রকৃতির।তবে হুমাইরার পড়াশোনা, চলাফেরা অনান্যদের মতো স্বাভাবিক হলেও হাসিবের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। শত চেষ্টা করেও ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারেন নাই তার বাবা মা।কেননা হাসিবের বয়স ১৮ বছর হলেও তার চলাফেরা এখনো তিন/চার বছর বয়সী শিশুদের মতো।সমবয়সীদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও খেলাধুলা করা অপছন্দ করে সে।তবে সব সময় শিশুদের খেলনা নিয়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে হাসিবের।কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দাওয়াতে গেলে সন্তানের জন্য বাসা থেকে রুটি, পরটা সঙ্গে নিয়ে যায় বলে জানান হুমাইরা ও হাসিবের পরিবার।
জন্মের পর থেকে ওই দুজনের ভাত না খাওয়ার খবরে এলাকায় অনেকেই অবাক হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছে পরিবার দুটি।চাল সিদ্ধ ভাত না খেলেও চালের গুড়া, চালের পিঠা পুলি পরটা খেতে পারেন তারা। এ ছাড়া মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও কলাসহ অন্যান্য খাবারে আপত্তি নেই তাদের।শুধু মাত্র সিদ্ধ চালের ভাত ছাড়া সব খেতে পারেন বলে জানিয়েছেন হুমাইরা নিজেই।
হুমাইয়ার প্রতিবেশি এমদাদুল হক বলেন, সুমাইয়া দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ভাত খান না এমন খবর শুনেছি।প্রথমে বিশ্বাস করতে না পারলেও ওর বাড়িতে গিয়ে দেখেছি পরিবারের সবাই ভাত খাচ্ছে আর ও খাচ্ছে ডিম রুটি কলা।ভাত না খেলেও এলাকার অনান্য বাচ্চাদের মতো সুস্থ চলাফেরা করতে দেখেন বলে জানান তিনি।
হাসিবের দাদা সুলতান আলী বলেন, আমার মেজো ছেলের ঘরে নাতি হাসিব।ছোট বেলা থেকে অনেক চেষ্টা করেছি হাসিবের মুখে ভাত তুলে দিতে পারি নাই। অনেক টাকা পয়সা খরচ করা হয়েছে কোনো লাভ হয় নাই। জানি না আল্লাহ পাক কখন নাতিটার মুখের দিকে তাকাবেন।নাতিটা ভাত খেতে পারলে খুব খুশি হতাম।
হাসিবের বাবা আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ বলেন, আমি গরিব।তারপরও আল্লাহ পাকের কাছে আশা করছি কোথাও কোনো ডাক্তার যদি সঠিক চিকিৎসা দিতে পারত তাহলে ঋণ করে হলেও ছেলের চিকিৎসা করাতাম।ছেলের চিকিৎসার পেছনে এখন পর্যন্ত ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হয় নাই।
সুমাইয়ার বাবা হাসান আলী বলেন, আমার মেয়ের জন্মের দেড় বছর পর থেকে ওর মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।কিন্ত কোনোক্রমেই তাকে ভাত খাওয়ানো সম্ভব হয় নাই। অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েছি চিকিৎসা করাতে অনেক খরচ করেছি।কোনো ডাক্তারই ওর আসল সমস্যার কথা বলতে পারে নাই।সব চিকিৎসক একটি কথা বলেছেন সুমাইয়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়-জবরদস্তি করা যাবে না।পরিণত বয়স হলে আশপাশের সামাজিকতা ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেলে হয়ত কোনো এক দিন ভাত খেতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটা যদি বর্তমান বাজারে সবচেয়ে দামি চালের ভাতও খেত।গায়ের রক্ত বেঁচে হলেও সারাজীবন ওই চালের ভাত খাওয়াতাম। খুবই কষ্ট লাগে আমরা পরিবারের সবাই ভাত খাই, মেয়েটা ভাত না খেয়ে থাকে।কেউ যদি আমার মেয়েকে ভাত খাওয়াতে পারত আমি একটি খাসি জবাই করে খাওয়াতাম।
হাসিবের সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, আমি ভাত খাই না, ভাত খেতে ইচ্ছা করে না।কেক রুটি খাই। ভাত ছাড়া অন্য সবকিছুই খেতে ভালো লাগে।
তবে হুমাইরা বলেন, আমি সব খাবার কম বেশি খেতে পারি।কিন্তু সিদ্ধ চালের ভাত দেখলেই আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।ভাতের গন্ধ পেলে বমি চলে আসে।কিন্তু ভাত না খেয়ে থাকলেও আমার কোনো সমস্যা মনে হয় না।বাবাকে বলেছি- বাবা আমাকে জোড় করো না।রুটি, কলা, ডিম, মাছ ও মাংস সব তো খেতে পারি।
কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুরই মোর্শেদ বলেন, এ বিষয় পরিবারের লোকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।তবে ভাতের পরিপূরক অন্য খাবার খেয়ে শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারলে কোন সমস্যা নেই।
ঊষার আলো-এসএ