পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা: আসামী রুদ্রের
স্ত্রীর উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ
ঊষার আলো প্রতিবেদক : নগরীর দৌলতপুরে আলোচিত স্কুল ছাত্রী শিশু অঙ্কিতার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার চার্জশীট চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তা আদালতে দাখিল হবে বলে নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ হাসান আল মামুন। তবে চার্জশীটে প্রীতম রুদ্র একাই আসামী হচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান।
এদিকে খুনি, নরপিচাষ, কুলাঙ্গার প্রীতম রুদ্রের ফাঁসির দাবিতে এলাকায় বিভিন্ন ওয়ালে সাটানো পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধর্ষক-খুনি রুদ্রের স্ত্রীর উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে স্বয়ং পুলিশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সোমবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে পাবলাস্থ ধর্ষক রুদ্রের চারতলাভবনের (বীনাপানি ভবন) সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গত ২৮ জানুয়ারি ৩য় শ্রেণি মেধাবী ছাত্রী শিশু অঙ্কিতাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছিল সেই থেকেই পাবলা বণিকপাড়াবাসী আন্দোলনে রয়েছেন। এমন ঘটনা যেন ওই পাড়ায় আর দ্বিতীয়টি না ঘটে পাশাপাশি সমগ্র পাড়ার মানুষকে একই ছাতার নীচে আনার লক্ষে গঠন করা হয় পাবলা বণিকপাড়া সোসাইটি।
কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পুলু মুন্সি। তিনি জানান, শিশু অঙ্কিতার ধর্ষণ ও হত্যাকারী প্রীতম রুদ্রের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনকারীরা এলাকায় পোস্টার সাটায়। সম্প্রতি ধর্ষকের গেটে সাটানো পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের একাধিক পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ হাসান আল মামুন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসেন। তারা প্রথমে আন্দোলনকারী নেতাদের নিয়ে ধর্ষকের বাসভবনের সামনে যান। সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীরা পোস্টার ছিড়ে ফেলার বিষয়টি সরেজমিনে দেখান। এমন সময় ধর্ষক রুদ্রের স্ত্রী ভবনের দ্বিতীয়তলায় বারান্দায় দাড়িয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে সবার সামনে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি পোস্টার ছিড়েছি; পারে যদি কেউ কিছু করুক।’ এছাড়াও সে হুমকি স্বরূপ নানা ধরণের কথা বলে। এমন কি তিনি ভবনের সামনে জড়ো হওয়ায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ভিডিও করেন। ওসি তাকে বারবার থামতে বললেও সে তাঁর কথা কর্নপাত করেনি। এমনই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ওই নারীল উর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণে স্বয়ং ওসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা (ধর্ষক রুদ্রের পরিবার) সংযত হয়ে কথা বলুন। আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সব সময় এখানে বসে থাকবে না। আপনারা এলাকার পরিবেশ উত্তেজিত করে তুলেছেন। এ জন্য আইন শৃংখলার কোন অবনতি হলে তার দায়ভার আপনাদের।’
অন্যদিকে পোস্টার ছেড়া ও আন্দোলনকারীদের সাথে খারাপ আচরণ করার অপরাধে ধর্ষক রুদ্রের স্ত্রী ও তার মাকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। অন্যথায় কোন ধরণের অঘটন ঘটলে তার দায় দায়িত্ব বণিকপাড়া সোসাইটি নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সোসাইটির সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পুলু মুন্সি। এ ঘটনার পর থেকে অবাঞ্চিত এ পরিবার নিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হলো বলে তিনি জানান। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির নেতা ও দৌলতপুর থানা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আশুতোষ সাধু,সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম হুমায়ুন কবির, তিলক গোস্মামী, মিজানুর রহমান স্বাধীন মোড়ল, বলরাম দত্ত, প্রসাদ সাধু, মনিরুজ্জামান মনি মোড়ল, শেখ ফিরোজ আলমসহ এলাকার গন্যমান ও তরুণ সমাজের নেতৃবৃন্দ।
সোসাইটির নেতা মিজানুর রহমান স্বাধীন মোড়ল বলেন, “এ নেক্কারজনক ঘটনার পর বিচারের দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। কিন্তু ধর্ষক পরিবারের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের পোস্টার ছিড়ে এবং আমাদের সাথে অশোভন আচরণ করে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এটা ঠিক করেনি।”
দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও বণিকপাড়া বসবাসকারী মোহাম্মদ হেলাল মুন্সি জানান, অঙ্কিতা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সাথে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে একজনকে আসামি করে চার্জশীট চূড়ান্ত করায় আমরা হতবাক হয়েছি। যে বাড়ির মধ্যে পাঁচ-ছয় দিন লাশ ছিল এবং ৪/৫ স্থান পরিবর্তন করে তাকে গুম করে রাখা হয়েছিল। এটা একা রুদ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদেরকে কিভাবে পুলিশ বাদ দিয়ে চার্জশিট দিল এবং লাশ উদ্ধার করার দিন চারজনকে ওই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদেরকে তার পরের দিনই ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। এক-দেড় মাস পরে তারা তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এর মধ্যে রহস্য রয়েছে বলে তার দাবি। অঙ্কিতা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেয়ার দাবি জানান এই নেতা।
নগরীর দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়ার সুশান্ত দে’র কন্যা তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অঙ্কিতা দে ছোয়া হত্যার শোক এখনও কাটেনি। কিন্তু ধর্ষক ও ঘাতকের পরিবার যে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের আচার আচরণ এমনটাই প্রমাণ করে বলে জানান সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে নিহত অঙ্কিতার ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট তিনি হাতে পেয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে ধর্ষণের পর রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। শিগগিরই চার্জশীট দাখিল করা হবে। তবে তার আগে চার্জশীট নিহতের পিতা ও আন্দোলনকারীদের দেখানো হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
নিহত অঙ্কিতার অসহায় পিতা সুশান্ত দে বলেন, “আমি শুনেছি শুধু রুদ্রকে একা আসামী করে চার্জশীট প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে সুশান্তকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রুদ্র কয়েকদিন লাশ গুম করে রাখে। এ সময় সে লাশ একাধীক স্থান পরিবর্তন করে। যা রুদ্রের একার পক্ষে সম্ভব নয়। রুদ্রকে যারা এ কাজে সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিলের দাবি জানান এ হতভাগা পিতা।”
উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি’২১ শুক্রবার দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়ার সুশান্ত দের কন্যা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অঙ্কিতা দে ছোয়া নিখোঁজ হয়। পরিবারসহ এলাকাবাসী অনেক খোঁজাখুজি করে এক পর্যায় ২৮ জানুয়ারী অত্র এলাকার বৃত্তশালী ব্যক্তি প্রভাত রুদ্রের চারতলা বাড়ীর নিচতলার বাথরুমে অঙ্কিতা দে ছোয়ার লাশ বস্তা বন্দি প্রায় গলিত অবস্থা পাওয়া যায়। এলাকাবাসী বসবাসরত সকল পরিবারের নারী পুরুষ এক সভা করে প্রভাত রুদ্রর পরিবারকে বয়কট করার ঘোষণা দেন।