ঊষার আলো রিপোর্ট: সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
-সিকান্দার আবু জাফর
‘সিরাজউদ্দৌলা’ বাংলার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য একটি নাম। এ নামটি বাংলার শাসনশক্তির পালাবদলের সঙ্গে যেমন সম্পর্কযুক্ত তেমনি বাংলা সাহিত্যের সঙ্গেও ওতপ্রতোভাবে জড়িত। বাংলার শেষ ও স্বাধীন নবাব হিসাবে সিরাজউদ্দৌলা নামটি একদিকে বাঙালির অহঙ্কারের জায়গা, অন্যদিকে ইংরেজদের কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে বাঙালির শোক, বেদনা ও শৃঙ্খলিত ইতিহাসের পরাজিত সৈনিক তিনি। পলাশীর আম্রকাননে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের ঘটনা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেকগুলো নাটক রচনা হয়েছে। গিরিশচন্দ ঘোষ, শচীন সেনগুপ্ত ও সিকান্দার আবু জাফর রচিত নাটক তার মধ্যে অন্যতম। একেকজন নাট্যকার একেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সিরাজকে বিচার করেছেন এবং সে দৃষ্টিকোণে তারা নাটক লিখে বাংলার শেষ ও স্বাধীন নবাবকে উপস্থাপন করেছেন। সাতচল্লিশ উত্তর বাংলাসাহিত্যে সিকান্দার আবু জাফরও তাদের বাইরে নন। তিনিও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নবীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ইতিহাসের পাতা থেকে সাহিত্যের পাতায় তুলে ধরেছেন। তবে নাট্যকারের হাতে সিরাজউদ্দৌলা শুধু পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত এক নবাব হয়ে থাকেননি। কালের প্রবাহে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে বাঙালির মুক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
একদিকে পুত্রস্নেহে অন্ধ আপন খালা ঘসেটি বেগমের প্রসাদ ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে প্রধান সেনাপতির চরম বিশ্বাসঘাতকতা নবীন, অদূরদর্শী দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে পরাজয়ের জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। রাজসভাসদদের ক্ষমতার লোভের কারণে সেদিন শুধু বাঙালি সিরাজের পরাজয় হয়নি, পরাজয় হয়েছে সমগ্র বাঙালির। নাট্যকার সিকান্দার আবু জাফর ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এমনই বাঙালি দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলাকে উপস্থাপন করেছেন। দেশপ্রেম থাকলেও আপনজনদের লোভের কাছে, রাজসভাসদদের মিথ্যা আশ্বাস আর অভিনয়ের জন্য সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত হতে হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। পলাশীর আম্রকাননে যুদ্ধাবস্থায় সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্রকারীদের সবকিছু বুঝতে পারলেও তিনি কিছু করতে পারেননি। এ নাটকটি বাংলা ও বাঙালির জীবনের পটপরিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। বাণিজ্য করতে আসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেশের প্রতি লোভ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সিরাজউদ্দৌলার রাজসভার অমাত্যদের ভূমিকা, অর্থ ও রাজক্ষমতার প্রতি লোভী মির জাফর আলি খাঁকে বিশ্বাস করা, রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখ ষড়যন্ত্রকারীদের বুঝতে না পারার অক্ষমতা সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করেছে।
নাটকটি চারটি অঙ্কে বারটি দৃশ্যে রচিত। এর মধ্যে আটটি দৃশ্যেই নবাবের উপস্থিতি। নাটকটি আবর্তিত হয়েছে নবাবকে কেন্দ্র করে। নাটকটির কাহিনিমুখ উন্মোচিত হয়েছে সিরাজের বাহিনীর কলকাতা আক্রমণের বর্ণনা দিয়ে। ঘটনা প্রবাহে পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের পরাজয় ঘটলে তিনি রাজধানী মুর্শিদাবাদে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে নতুন করে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু বিধিবাম। শত্রুর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে বন্দি হন এবং কৃতঘ্ন মোহাম্মদি বেগের হাতে নিহত হন।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে-
‘সিরাজউদ্দৌলা’ ইতিহাস আশ্রিত নাটক। এ নাটকটি পড়ার সময় তৎকালিন রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা বিশেষভাবে প্রয়োজন। কেননা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেন এদেশে এসেছে? তাদের ইংল্যান্ড থেকে এদেশে আশার উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কেন তা পরিবর্তন হয়ে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার দিকে ঘুরে যায়? আরও কোন কোন দেশ থেকে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আসত? নবাব আলিবর্দি খাঁ কিভাবে বাংলার মসনদে বসলেন? তিনি মারা যাওয়ার পর কেন সিরাজকে বাংলার সিংহাসনে বসান হয়? সিরাজকে বাংলার নবাব করায় তার খালা ঘসেটি বেগম কেন হিংসায় জ্বলে উঠলেন? প্রধান সেনাপতি মির জাফর আলি খাঁর জীবন ইতিহাস কেমন ছিল? তিনি কেন সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত হলেন? সিরাজ কেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে শত্রু হয়ে উঠেছিল? ঘসেটি বেগম ও সেনা প্রধানসহ রাজ-অমাত্যদের বিরাট অংশ কেন সিরাজের বিপক্ষে গিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলায়? সিরাজের প্রতি রাজপ্রাসাদের অমাত্যদের অনাস্থার বিষয়টি বেনিয়ারা কীভাবে জেনেছে? সবকিছু জেনেও কেন সিরাজ মির জাফরকে বরখাস্ত বা বন্দি করেনি? কেন সিরাজ রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ ও রায়দুর্লভকে ষড়যন্ত্র থেকে আলাদা করতে পারেনি? পঞ্চাশ হাজার সৈন্য ও তেপ্পান্নটি কামান থাকা সত্ত্বেও কেন সিরাজের বাহিনীকে ইংরেজদের তিন হাজার সৈন্য ও আটটি কামানের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে? মিরমর্দান, মোহনলাল ও রাইসুল জুহালা তথা নারায়ণ সিংহের মতো দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা কী কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিয়েছিল? নাটকের শুরুতে কেন সিরাজ ইংরেজদের কলকাতার দুর্গ আক্রমণ করেন? সিরাজের অদূরদর্শিতা ইংরেজরা ধরতে পারলেও সিরাজ কেন ইংরেজদের প্রতি বার বার ক্ষমাশীল হয়েছেন? দেশের প্রতি সিরাজের ভালোবাসা, স্ত্রীর প্রতি সিরাজের ভালোবাসা, দেশবাসীর প্রতি সিরাজের ভালোবাসা কেমন ছিল? অসহায় লবণচাষিদের প্রতি ইংরেজদের অত্যাচারের বিপরীতে সিরাজের দেশপ্রেম কতটা শক্ত ও বাস্তবসম্মত ছিল? পলাশী থেকে পালিয়ে রাজধানী মুর্শিদাবাদে গিয়েও সিরাজ কেন জনগণকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে একত্রিত করতে পারলেন না? ক্লাইভ, ওয়াটস ও ওয়াটসনদের ষড়যন্ত্রের জাল কেন সিরাজ ভেদ করতে পারলেন না? ঘসেটি বেগম কেন সিরাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল?
(প্রতিটি দৃশ্যে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা নির্ভুলভাবে জানতে হবে। সিরাজউদ্দৌলা, মিরজাফর আলি খাঁ, ঘসেটি বেগম, রাইসুল জুহালা, মোহনলাল, মোহাম্মদি বেগ, ক্লাইভ, উমিচাঁদ ও লুৎফুন্নেসা চরিত্র ভালো করে জানতে হবে। এসব চরিত্রের বিস্তার, নাটকের দৃশ্য পরম্পরায় এদের ভূমিকা ভালো করে জানতে হবে।)
অনুধাবন প্রশ্ন
১. পলাশির যুদ্ধে নবাবের পরাজয় হয়েছিল কেন?
২. পলাশির যুদ্ধের পর উমিচাঁদ পাগল হয়ে যায় কেন?
৩. ‘আজ আমরা সবাই সন্দেহ-দোলায় দুলছি’- কেন বলা হয়েছে?
৪. ‘বাংলার মসনদের জন্য আমি আপনার কাছে ঋণী’- ব্যাখ্যা কর।
৫. ‘স্বার্থান্ধ প্রতারকের কাপুরুষতা বীরের সংকল্প টলাতে পারেনি’- ব্যাখ্যা কর।
৬. রাইসুল জুহালা শিল্পীর ছদ্মবেশে ঘসেটি বেগমের বাড়ি গিয়েছিল কেন?
৭. রায়দুর্লভ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেছিল কেন?
৮. সিরাজ বাহিনী কলকাতা দুর্গ আক্রমণকালে ইংরেজরা সাদা পতাকা উড়িয়েছিল কেন?
৯. নবাব মিরজাফরের দরবারে উমিচাঁদ বিচার দিয়েছিল কেন?
১০. ইংরেজ ক্যাপ্টেন, কর্নেলরা সবাই দুর্গ থেকে পালিয়ে যায় কেন?
১১. ‘ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন’- ব্যাখ্যা কর।
১২. ‘তোমার সৈন্যদের মুক্তি দিচ্ছি, কিন্তু তুমি আমার বন্দি’- কাকে, কেন বন্দি করা হয়েছে?
১৩. ‘চারদিকে শুধু অবিশ্বাস আর ষড়যন্ত্র’- ব্যাখ্যা কর।
১৪. ‘আমার নালিশ আজ আমার নিজের বিরুদ্ধে’- কেন বলা হয়েছে?
১৫. পলাশির প্রান্তরে বাঙালির পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
১৬. ‘শুধু ওই একটি পথেই আবার আমরা উভয়ে উভয়ের কাছাকাছি আসতে পারি’- ব্যাখ্যা কর।
১৭. ‘আসামির সে অধিকার থাকে নাকি’- কোন প্রসঙ্গে, কেন উক্তিটি করা হয়েছে?
১৮. রমণীর ছদ্মবেশ ত্যাগ করে ওয়াটস কেন বলেছিল ‘সরি টু ডিজাপয়েন্ট ইউ জেন্টলমেন’?
১৯. মোহনলালকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল কেন?
২০. ‘আমরা আপনার কর্তৃত্ব মানব না’- সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর।
২১. ‘কাপুরুষ বাঙালির কথায় যুদ্ধ বন্ধ হবে না’- কোন প্রসঙ্গে, কেন বলা হয়েছে?
২২. নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফর ও তার সহযোগীদের কয়েদখানায় আটক রাখতে চেয়েছিলন কেন?
২৩. কলকাতার দিক থেকে বিপদের শঙ্কা নেই কেন?
২৪. ‘ভাংয়ের গেলাস এবং নাচওয়ালি ছাড়া সে আর কিছুই জানে না’- কার সম্পর্কে, কেন এমন বলা হয়েছে?
২৫. ‘নবাবের হুকুম অমান্য করা রাজদ্রোহিতার শামিল’- সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর।
২৬. ‘আমরা এমন কিছু করলাম, যা ইতিহাস হবে’- কেন বলা হয়েছে?
ঊষার আলো-এসএ