UsharAlo logo
সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় সাড়ে পাঁচশ বিঘার ঘের দখল করলো দুই বিএনপি নেতা

ঊষার আলো প্রতিবেদক
এপ্রিল ২০, ২০২৫ ৪:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খুলনার পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম এনামুল হক ও পৌর বিএনপির আহবায়ক আসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে লতা-পুতলাখালি মৌজায় সাড়ে পাঁচশ বিঘা মাছের ঘের দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন দেলুটি ইউনিয়নের দিঘলিয়া গ্রামের সত্যজিৎ সরদার।

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনেন সত্যজিৎ সরদার। গত ৩১ ডিসেম্বর তার ঘেরটি দখল এবং কয়েক লাখ টাকার মাছ, নগদ অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ লুট হলেও থানা মামলা নেয়নি। অনেক দেনদরবারের পর অবশেষে গত ৬ এপ্রিল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাইকগাছা থানা মামলা নিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মামলা হওয়ার পর এনামুল বাহিনীর মহড়া ও তান্ডবে তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
লিখিত বক্তব্যে সত্যজিৎ বলেন, ওই দুই বিএনপির নেতা শুধু তার ঘেরই নয়, ৫ আগস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অসংখ্য মানুষের ঘের ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতভিটা, জমি দখল ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা এনামুল অন্তত ২০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ তার। সত্যজিৎ বলেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ১৩০ জন জমি মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৫৫০ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেন। তার আচরণ ও লেনদেনে সন্তষ্ট হয়ে জমির মালিকরা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তাদের জমি পুনরায় লিজ দেয়। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণ অভ্যূত্থানের পর পাইকগাছার আতংক হিসেবে পরিচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, নানা অপকর্মের দায়ে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এস এম এনামুল হকের নজর পড়ে তার ঘেরের দিকে। সে সময় ঘেরে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মাছ মজুদ ছিল। এনামুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ঘেরের বাসায় গিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। নতুবা খুন করে লাশ গুনাখালী নদীতে ভাসিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ঘেরে এসে এক লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়। এছাড়া নিয়মিতভাবে চাঁদা দাবি অব্যাহত রাখে। পহেলা নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা এনামুলের নেতৃত্বে নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুনরায় ঘেরে এসে পূর্বে দাবিকৃত ১৫ লাখ টাকা চাঁদা চায়। টাকা না পেয়ে তাকে বেপরোয়া মারপিট করে এবং ঘেরের ক্যাশবাক্সে থাকা মাছ বিক্রির দেড় লাখ টাকা লুটে নেয়। তাদের হামলা ও ভাংচুরে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় টর্চ লাইট, খেপলা জাল, সোলার প্যানেল সহ ব্যাটারি লুট করে নিয়ে যায়, যার মূল্য প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রায় সোয়া এক লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে এনামুল হক ও আসলাম পারভেজের নেতৃত্বে তাদের বাহিনী আবারও ঘেরে হামলা চালিয়ে পুরো ঘেরটাই দখল করে নেয়। তারা ঘেরে ধরে রাখা ৫ মন ভেটকি, ১০ মন টেংরা, ১৫ মন তেলাপিয়া, পারশে, ভাংগন, গলদা লুটে নেয়। তাকে ও ঘেরের অন্যান্য স্টাফকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর জখম করে।
দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী এনামুল এরপর রাতের অন্ধকারে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সহ মটর সাইকেলের বহর নিয়ে ঘেরের জমির মালিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন একটি দলিলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তাদের কাউকে দলিলে কি লেখা রয়েছে তা পড়ার সুযোগ দেয়নি। এরপর সে প্রচার করে জমির মালিকরা নাকি স্বেচ্ছায় তাকে ও আসলাম পারভেজকে ঘের করার জন্য ডিড দিয়েছে।
সত্যজিৎ অভিযোগ করেন, এনামুল হক বিএনপির মনোনয়নে ইউপি চেয়ারম্যান হলেও তার প্রকাশ্য আতাত ছিল আওয়ামী লীগের উচ্চ মহলে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল ছিল তার গডফাদার ও গুরু। আওয়ামী লীগের এমপি নুরুল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম জাহাঙ্গীরের সাথে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দোসর অরণ্য ঢালী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। পবিত্র মন্ডল আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর। সুকুমার কবিরাজ ইউপি মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা। কিশোর মন্ডল এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। অরণ্য, কুমারেশ ও পবিত্রর ভারতে বাড়ি রয়েছে। এনামুল অস্ত্র সহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সে সুন্দরবনের ডাকাত দল পরিচালনা করে বলে এলাকাবাসী অবগত।

ঊআ-বিএস