ঊষার আলো রিপোর্ট : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা করে জবি। ১৯ পেরিয়ে ২০ বছরে পদার্পণ করেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটি পালনে নানা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে দিবসটি পালনে এবার চিত্রটি হবে একটু ভিন্ন। জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে উদযাপন হবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
সূত্র জানায়, জবির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসাবে আজ দিনব্যাপী বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা। সাড়ে ১০টায় মুক্তমঞ্চে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। এরপর ক্যাম্পাস থেকে আনন্দ র্যালি বের হবে। র্যালি শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কর্তৃক জবি ঘোষণা ফলক উন্মোচন করা হবে (পুনঃস্থাপনা)। উপাচার্য ঘোষণা ফলক উন্মোচন করবেন।
এরপর নবীন শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে মুক্তমঞ্চে স্বাগত জানানো ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের স্মরণ ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হবে। এর মাঝে সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চারুকলা প্রদর্শনী ও চিত্রপ্রদর্শনী শুরু হবে। বিকাল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
জবির পূর্বনাম জগন্নাথ কলেজ। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৮৭২ সালে নাম বদলে রাখা হয় জগন্নাথ কলেজ। আর এই নামটি রাখা হয় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর বাবার নামে। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই কলেজটি ১৮৮৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির এবং ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত করা হয়। ১৯৬৮ কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হলেও পরের বছরই আবার বেসরকারিকরণ করা হয়। ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠা হয় তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জবি আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
বর্তমানে জবি প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, ৯৬০ একাডেমিককর্মী, ৮৫০ প্রশাসনিক স্টাফের সমন্বয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জায়গার ওপর জবি শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর ও লেক নির্মাণ শেষে মাটি ভরাট শুরু হয়েছে। দৃশ্যমান হবে সুবিশাল জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এলাকা। এরপর শুরু হবে অবকাঠামো নির্মাণকাজ। সম্প্রতি স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাঙ্কিং-২০২২ এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রসায়নবিষয়ক গবেষণা সূচকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে জবি। টাইমস হায়ার আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাঙ্কিং-২০২৪-এর পজিশন অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৬ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ ৭ম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবে জগন্নাথের অসংখ্য শিক্ষার্থী তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। এখনো অসংখ্য শিক্ষার্থী বুলেট, গুলির যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। এটা আমার কাছে একটা মর্মান্তিক ব্যাপার। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে আমি উপাচার্য হিসাবে মনোনীত হয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো শিক্ষার্থী। স্টুডেন্ট ফোকাস ক্যাম্পাস গঠন করা। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যৎ জীবন বেশি প্রাধান্য পাবে।
ঊষার আলো-এসএ