UsharAlo logo
বুধবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঝিকরগাছায় বৃদ্ধি পাচ্ছে রঙিন মাছ চাষ

ঊষার আলো
জুন ১৯, ২০২১ ১০:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : শোভাবর্ধনের জন্য বাসাবাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা হয় রঙিন মাছ। শখের বসে অনেকেই রঙিন মাছ কিনে পালন করলেও এই মাছ এখন চাষ হচ্ছে হ্যাচারী ও জলাশয়ে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায়ও এই রঙিন মাছের চাহিদা বাড়ছে। দাম ভাল ও লাভজনক হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে রঙিন মাছের চাষ।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের নারাঙ্গালি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সালমান সরদার। বেশ জোরেশোরেই চাষ করছেন রঙিন মাছ বা অরনামেন্টাল ফিস। তার সফলতায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দুর দুরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসছেন। কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাহারি রঙের রঙিন মাছ। ২০১৮ সালের শুরুতে খুলনা শহরের একটি অ্যাকুয়ারিয়াম ফিসের দোকান থেকে শখের বশে দেড় হাজার টাকা দিয়ে ৬০ পিস রঙিন মাছ কিনে আনেন সালমান সরদার।
তখন মাছের নামও জানতেন না তিনি। পরে জানতে পারেন সেগুলো হচ্ছে গোল্ড ফিস বা কমেট প্রজাতির মাছ। গ্রামের বাড়িতে ধান সিদ্ধ করার হাউজে সেগুলো রেখে দেন। এভাবে পার হয়ে যায় কিছুদিন। ছয় মাস পর পানি পরিবর্তন করার সময় দেখতে পান মাছগুলোর মধ্যে কয়েকটির পেটে ডিম। এদের বিষয়ে কিছু জানা ছিল না বিধায় অসাবধানতাবশত ৫টি মাছ মারা যায় তার। পানি পরিবর্তনের পর দেখতে পান, সেগুলো ডিম ছেড়েছে। বুঝলেন পানি পরিবর্তন করা হলে এগুলো ডিম পাড়ে। এরপর বংশবৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আবাস করা হয় আরও চারটি হাউজে।

সালমান সরদারের খামারে বর্তমান ৫২ প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, গোল্ড ফিসের কয়েকটি প্রজাতি যেমন অরেন্ডা, রেডক্যাপ, ব্ল্যাকমোর, রুইকিন, লিচি ইত্যাদি। এছাড়াও আছে কমেটের তিন প্রজাতি ক্যালিকো, সাধারণ কমেট আর তিন লেজওয়ালা কমেট (এটি খামারে ক্রস করা), গাপ্পির সাত প্রজাতি, মলি, শর্টবেল, প্লাটি, জাপানি কইকার্প, থাইল্যান্ডের মিল্কি, মিল্কি বাটারফ্লাই ইত্যাদি।
১৫০০ টাকার মাছ দিয়ে শুরু করে এখন সালমানের খামারে রয়েছে ৩০ হাজার প্যারেন্টস, ১০ লাখের বেশি রেণু আর তিন লাখের বেশি ধানি মাছ। বর্তমানে নিজ গ্রাম নারাঙ্গালিসহ আশপাশের গ্রামে তার ২৩টি পুকুর রয়েছে, খনন করা হচ্ছে আরও দু’টি। চলতি বছরে মোট ৩০টি পুকুরের টার্গেট রয়েছে সালমানের। পানিসারা-গদখালি অঞ্চল যেমন ফুলের রাজধানী, তেমনি এই অঞ্চলকে রঙিন মাছের রাজধানী করতে চান সালমান সরদার।
সালমানের রঙিন মাছের খামারে এখন ২৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সপ্তাহে তিন-চারদিন জেলেরা এসে জাল টানেন তার পুকুরে।
আইন কলেজের ছাত্র সালমানের খামারে যারা কাজ করছেন, তাদের বেশিরভাগই ছাত্র। তারা কেউ-কেউ সরকারি এমএম কলেজ, আবার কেউ-কেউ সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র। কয়েকজন এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় তারা এখানে কাজ করছেন।
সালমান সরদার জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মাছ বিপণন শুরু হয়। আশপাশের এলাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসেন মাছ কিনতে, চাষাবাদ পদ্ধতি শিখতে। গ্রামের অন্তত ১০ জন উদ্যোক্তা তার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলায় এমন উদ্যোক্তা হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি।
মূলত ধানি মাছ (সাইজ ২ ইঞ্চি) বেশি বিক্রি হয় বলে জানান এই উদ্যোক্তা। খামার থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ ব্যাগে এসব মাছ বহন করে নিয়ে যায় ক্রেতারা। তিনি গোল্ড ফিস প্রতি পিস ২০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এছাড়া কমেট ১০ টাকা, গাপ্পি মলি, শর্টবেল ইত্যাদি ১০ টাকায় বিক্রি হয়। মাসে খরচ বাদে লাখ টাকার উপরে তার লাভ থাকে বলে জানায় সালমান।

স্বপ্নিল পরিবার ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা রয়েছে সালমানের। এই সংস্থার মাধ্যমে এলাকার প্রতিবন্ধী মানুষের সেবা করে থাকেন তিনি। করোনাকালে তিনি এই সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের বাসায় গোপনে খাবার, মাক্স, স্যানিটাইজারসহ নানা সামগ্রী দিয়ে চলেছেন। মাছের আয়ের অংশ থেকেই মূলত এসব সেবামূলক কাজ করেন বলে জানান এই তরুণ উদ্যোক্তা। ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিবন্ধী যে কেউ মাছের খামার করতে চাইলে বিনামূল্যে তাকে সকল সুবিধা দেয়ার।
এ ব্যাপারে উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) রিপন কুমার ঘোষ বলেন, আমি শুনেছি, নারাঙ্গালি এলাকায় এক তরুণ এই রঙিন মাছ চাষ করছেন। দু’একদিনের মধ্যে সেখানে পরিদর্শনে যাবো। সালমান যদি চান, তাহলে আমরা তার খামার পরিদর্শন করে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের কিছু অর্থ পেতে তাকে সহায়তা করবো।
(ঊষার আলো-এমএনএস)