UsharAlo logo
রবিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ চুক্তি

ঊষার আলো রিপোর্ট
এপ্রিল ৯, ২০২৫ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এই চুক্তি হলো শান্তিপূর্ণ ও অসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। চুক্তিতে বাংলাদেশ এখন নাসার ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন চুক্তি সই করেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিনিয়োগ আকর্ষণে বিডা এই সম্মেলনের আয়োজন করে। বুধবার সকাল ১০টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

এদিকে নাসার সঙ্গে চুক্তি শেষে একই ভেন্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন চৌধুরী আশিক মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিডার চেয়ারম্যান বলেন, পাঁচটি বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। সংস্থাটি আরও এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। তার মতে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। এই সূচক অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আজ স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। আরও জানানো হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলাকে কেন্দ্র করে সোমবার বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। এ ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগে প্রস্তুত দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির শীর্ষ কোম্পানির প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে একথা জানান।

২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত আর্টেমিস অ্যাকর্ডস চুক্তিগুলো হলো একটি অ-বান্ধনযোগ্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার একটি সিরিজ; যার লক্ষ্য হলো মহাকাশ অনুসন্ধানে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও টেকসই সহযোগিতা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে নিজেকে সম্পৃক্ত করল। এটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

চৌধুরী আশিক বলেন, ‘এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারবে।’ প্রতিরক্ষা সচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, আর্টেমিস অ্যাকর্ডস মূলত আউটার স্পেস ট্রিটি রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন এবং অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ অ্যাগ্রিমেন্টের নীতিগুলো অনুসরণ করে তৈরি একটি নির্দেশিকা; যা মহাকাশের শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহারে সহায়ক। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ স্পারসো গঠন করে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে কাজ শুরু করে এবং তখন থেকেই আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলেছে।

প্রতিরক্ষা সচিব আরও বলেন, আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো মহাকাশে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আর্টেমিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, লাতিন আমেরিকানসহ ৫৩টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যুক্ত হয়ে একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হলো। আশরাফ উদ্দিন বলেন, এই চুক্তি প্রযুক্তি স্থানান্তর ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দরজা খুলে দেবে। এর মাধ্যমে নাসা ও স্পারসোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে এবং বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রম জোরদার হবে। তিনি বলেন, নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রবেশাধিকার পাবে, যা বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। এছাড়া বাংলাদেশের স্পারসোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু মনিটরিং স্যাটেলাইট তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে; যা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশ নিতে পারবে। আর শিক্ষার্থীরা নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বৃত্তি ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হতে পারবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। এই সূচক অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় তা অনুসরণ করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের এমন কোনো বাজার পাওয়া যাবে না, যেখানে সমস্যা নেই। প্রত্যেক দেশেরই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এসব সমস্যা চিহ্নিত করে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড), ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা সরকারের প্রতি লালফিতার দৌরাত্ম্য কমানো এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দাবি জানান। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করতে এলে সরকার কী ধরনের সুবিধা দেবে এবং কীভাবে প্রশাসনিক জটিলতা কমানো হবে। আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কারোপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্যারিফের এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের একার নয়, বরং এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি এবং তা প্রকাশ্যেও এনেছি।’

বিনিয়োগে প্রস্তুত দক্ষিণ কোরিয়া : এদিকে মঙ্গলবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিনিয়োগকারী দল। তারা বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত বলে জানান। ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে দলে এলজির কর্মকর্তাসহ কোরিয়ার টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বৃহৎ বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছিলেন। এর আগে সোমবার তারা চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শ্রম, শিল্প, জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিতে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এমন সময়ে আপনারা বাংলাদেশে এসেছেন যখন আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করছি। এই নতুন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এখন সহজ ও ঝামেলামুক্ত।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনাদের জন্য বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা আমাদের দায়িত্ব। আমি জানি, গত ১৬ বছরে আপনাদের অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে, আমরা সেই সময়ের ক্ষতিপূরণ দিতে চাই।’

আয়োজকরা জানান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে এই আয়োজন। এতে ৪০টির বেশি দেশের সাড়ে ৫০০ বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। এর বড় অংশই চীনের।

এছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীরা এসেছেন। দেশেরও ২ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রথম দিন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দলটি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করে। দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার তারা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে। বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিন স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এই ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে সম্মেলনের সব ইভেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সরেজমিন তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বেশ কয়েকটি দেশের বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হবে। দেশি-বিদেশি পাঁচজন বিনিয়োগকারীকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

ঊষার আলো-এসএ