ঊষার আলো রিপোর্ট : বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে (পণ্যমূল্য কমাতে) ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, সরাসরি উৎপাদক থেকে পণ্য এনে বাজারজাত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত কমবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমে আসবে। শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত বিভিন্ন দপ্তর, অ্যাসোসিয়েশন এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
এর আগে সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের মাঠ প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে, আমরা সিস্টেম ভাঙব। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে এই জায়গাগুলোতে নতুন লোকদের বসাব।
চট্টগ্রাম চেম্বারের মতবিনিময় : সভা শুরুর আগে হট্টগোল দেখা দেয়। একদল ব্যবসায়ী চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মাহফুজুল হক এ সময় দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ারও চেষ্টা করলে ব্যবসায়ীদের একাংশ বিক্ষোভ শুরু করে। ‘আওয়ামী লীগের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ নানা স্লোগান দেন। মাহফুজুল হক শাহকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেন। তাকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এ সময় সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলকারীরা দাবি করেন, মাহফুজুল হক চেম্বারের গত কমিটিতে ছিলেন। ওই কমিটি ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। অতীতে চেম্বারকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা লোকজনকে আর ফিরে আসতে দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর শ্রম উপদেষ্টাসহ অতিথিরা সভাস্থলে আসেন।
সভায় শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের বাদ দিয়ে সব দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বিগত সরকারের মতো একই ধারণার মানুষগুলো আবার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে না পারে। যাতে তাদের হঠাতে আবারও যেন গণ-অভ্যুত্থান করতে না হয়। কারণ সব দলের অংশগ্রহণে ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালিত হলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারবেন। বিগত সরকারের সময়ে দখল-অপদখলের কারণে বাণিজ্য সংগঠনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান করে চেম্বারকে কার্যকর করার জন্য প্রশাসককে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থসংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের আশ্বাস দেন। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা এ সময় শ্রম উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। তারা চট্টগ্রাম চেম্বারে সংস্কার, ভুয়া ভোটার বাতিল ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি জানান। সামনে রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য না বাড়ে সেজন্য পণ্য আমদানিতে জোর দেওয়া এবং চিনি-তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক কমানোর আহ্বান জানান। তারা বলেন, গত সরকারের আমলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অনেক ব্যাংকে টাকা নেই। এ কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। তাই আমদানি কমছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বেসরকারি ১৯টি ডিপো যেন নিজেদের ইচ্ছেমতো চার্জ নির্ধারণ করতে না পারে, সেজন্য এগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া গার্মেন্ট কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য টিসিবির পণ্য বরাদ্দ দেওয়ার দাবিও তোলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তৃতা করেন সরওয়ার জামাল নিজাম, এরশাদ উল্লাহ, আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, মো. শওকত আলী, ছালামত আলী, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু প্রমুখ।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি : সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সভায় শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের হয়তো অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। একটা বিপ্লবের পরে কোনো কিছুই আর কাঠামোগতভাবে চলে না। আমরা সিস্টেমটা এখনো বজায় রেখেছি এবং আমরা প্রত্যাশা করি, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে, আমরা সিস্টেম ভাঙব। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে এই জায়গাগুলোতে নতুন লোকদের বসাব।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, টাস্কফোর্স বা ভোক্তা অধিকার-আপনারা কয়টা অভিযান পরিচালনা করেছেন, কী পরিমাণ কাজ করেছেন সে বিষয়ে কিন্তু আমি কিছুই পাইনি। আমাকে বাণিজ্য সচিব তিন দিনের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। আমি সেই প্রতিবেদনে একদিন চট্টগ্রামের নাম পেয়েছি, বাকি দুদিন আপনাদের নামই নেই। ৪০-৪৫টা জেলার মধ্যে টাস্কফোর্সের অভিযান চলেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে তিন দিনের মধ্যে দুই দিনই আসলে কোনো অভিযান হয়নি। আমার মনে হয়, এই জায়গায় আপনাদের সদিচ্ছার ঘাটতি আছে কিংবা সরকারের প্রতি অসহযোগিতার একটা ব্যাপার আছে। আপনাদের অসহযোগিতার কারণে যে স্থবিরতা আছে, এটা নিয়ে সর্বশেষ ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।
ঊষার আলো-এসএ