ঊষার আলো প্রতিবেদক : মহানগরী খুলনা জুড়ে প্রতিনিয়ত ভিক্ষুকদের সংঘবদ্ধ বিচরণ অনেকটাই সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলছে। নগরীর বিভিন্ন দোকানে দোকানে, শপিংমল, বাজার ঘাট, কবর স্থান, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট, কোর্টচত্ত্বর বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরেরসহ ধর্মীয় উপসানালয়ের সামনে ও বাড়িতে বাড়িতে তাদের আনগোনা বাড়ছে।
মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো যানবাহনের যাত্রী, বিভিন্ন বিপনীকেন্দ্রে, খাবারের হোটেল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ চলন্ত পথে ভিক্ষা বৃত্তি করতে দেখা যাচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতা দোহাই দিয়ে আবার কিছু সংখ্যক ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার, মেয়ের বিয়ে, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নারীরা ,স্বামী মারাত্বক অসুস্থসহ অনেকেই সাথে ১/২ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তি করছে। বিশেষ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থান সমূহের সর্বস্তরে এ সকল ভিক্ষুকদের আনাগোনা প্রায় সকলের নজরে পড়বেই। প্রতিদিনই সকল ভিক্ষুকদের আনাগোনায় সাধারণ লোক, ব্যবসায়ীমহলসহ ক্রেতারা বেশ নাজাহাল। এছাড়া নগরীর টুটপাড়া, নিউ মার্কেট, কোর্টচত্ত্বর, শান্তিধাম, সাতরাস্তা, রয়েলমোড়, পিটিআই মোড়, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারীসহ বিভিন্ন মসজিদের সামনে প্রতি জুম্মাবাদ অসংখ্যক ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। এ ভিক্ষুকদের অধিকাংশই নারী ও ছোট শিশু, বৃদ্ধ, কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধি আর অধিকাংশই শারিরীকভাবে সুস্থ ব্যক্তি। খুলনাকে ভিক্ষুকমুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে বেশ আগে কিন্তু সর্বস্তরে এখনো ভিক্ষুকমুক্ত অঞ্চল হিসাবে এখানো গড়ে ওঠেনি। তারই ধারবাহিকতা প্রতিনিয়ত বইছে নগরীর সর্বস্তরের মানুষ।
খুলনা পৈ-পাড়ার ব্যবসায়ী সন্জিত ঘোষ বলেন, বর্তমানে দৌলতপুরে প্রচুর সংখ্যক ভিক্ষুক বেড়েছে। শুক্রবার তো কথাই নেই। বর্তমানে দেখছি যে সুস্থ লোক তারপরও ভিক্ষা করছে।
কেসিসি’র ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সমাজের মানুষ অবশ্যই প্রতিবন্ধি আর বৃদ্ধ অসহায় মানুষের পাশে দাড়াবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বর্তমানে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করছে তাদের অধিকাংশই শারীরিকভাকে সুস্থ ব্যক্তি। এর অধিকাংশই মহিলা। যারা সুস্থ থেকেও কোন সরকারী হাসপাতালের বহিঃবিভাগের বা বেসরকারী ক্লিনিকের ঔষুধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে ভিক্ষাবৃত্তি করছে। অচিরেই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
খুলনা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আইনাল হক বলেন, ভিক্ষুকদের স্থায়ী পুর্নবাসনের জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবুও যারা এ কাজটিকে পেশায় পরিনত করেছে তাদের জন্যই মূলত ভিক্ষাবৃত্তি কমছে না। বর্তমান সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা, বৃদ্ধা ভাতা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার প্রত্যেক প্রতিবন্ধীসহ বৃদ্ধদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছে। প্রতিবন্ধী যেই হোক সে ভিক্ষুক বা অন্য কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তার মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দিব।
খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইউসুফ আলী বলেন, জেলা প্রশাসনের সহোযোগিতায় খুলনায় বসবাসরত ভিক্ষুক পূর্নবাসনের জন্য সৃজন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। তারপরও থেমে নেই ভিক্ষাবৃত্তি। এ বিষয়ে আমি অবগত। করোনাকালীন সময়ের জন্য আমরা ভিক্ষাবৃত্তির উপর যেমন জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।