যশোর প্রতিনিধি : পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক তিন দিনের ছুটির পর রবিবার (১৬ মে) প্রথম কার্যদিবসে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ফিরে আসেনি কর্মচাঞ্চল্য। উভয় দেশের বন্দর ব্যবহারকারীরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। বন্দর থেকে আমদানিকৃত মালামাল তেমন খালাস হয়নি। অনেক আমদানিকারক মালামাল খালাস না নেয়ায় বন্দরে পণ্যজট দেখা দিয়েছে। তবে ভারতে লকডাউনে আমদানি-রফতানি বন্ধের আশংকা করা হলেও সেটা হয়নি। সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি সচল ছিল।
কাস্টমস ও বন্দর সূত্রে জানা যায়, রবিবার (১৬ মে) অফিস হলেও তেমন কোন কাজ হয়নি। অফিস খুললেও ঈদের আমেজ কাটেনি। কাস্টমস অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চেয়ার টেবিল খালি দেখতে পাওয়া যায়। বেনাপোল কাস্টমসে যে সব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ছিল তারাও ঈদের ছুটির পর কর্মস্থলে আসতে পারেননি।
বন্দর থেকে মালামাল দ্রুত খালাস প্রক্রিয়া শুরু করলেও আমদানিকারকদের কাছ থেকে তেমন একটা সাড়া মেলেনি। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে মালামাল যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। স্থান সংকুলানের অভাবে ঈদের আগে ও ঈদের পরে ভারত থেকে পণ্য বোঝাই কয়েকশ’ ট্রাক বন্দরের টার্মিনালে পণ্য আনলোডের অপেক্ষায় বসে আছে। বন্দরের অভ্যন্তরে জায়গা খালি হলে এসব পণ্য সেখানে রাখা হবে। পণ্যজট নিরসনে দ্রুত মালামাল খালাস দেয়ার প্রক্রিয়া বন্দর কর্র্তৃপক্ষ শুরু করলেও কোন কাজে আসেনি। ঈদের ছুটির পর রবিবার (১৬ মে) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি কাঁচামাল ছাড়া তেমন মালামাল খালাস হয়নি বন্দর থেকে। ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ আমদানিকারকরা ঈদের আমেজ কাটিয়ে উঠে এখনও পর্যন্ত তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় করে তুলতে পারেনি। ঢাকার অনেক আমদানিকারকরা পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ করতে চলে যান দেশের বাড়িতে। তারাও আসেন অনেক পরে। ঈদের আমেজ কাটার পর তারা আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাস করে থাকেন।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি চললেও সেটা আগের দিনের মত নয়। যেখানে প্রতিদিন ৩০০/৩৫০ ট্রাক পণ্য ভারত থেকে আসে ও বেনাপোল থেকে ১৫০ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হলেও রোববার বেলা ৪টা পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি পণ্য এসেছে ১৭০ ট্রাক ও ভারতে গেছে মাত্র ৩৮ ট্রাক। তবে রাত পর্যন্ত আমদানি-রফতানি চালু থাকায় তা কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ঈদের ছুটিকে অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় তারা নানা কারণে আসতে পারেনি। ২/৩ দিন পর বন্দর ও কাস্টমসে কর্মচাজ্ঞল্য ফিরে আসবেন।
প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক আসে ভারত থেকে। এ ছাড়াও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাচাঁ মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ৯০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসিতে পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮১ কিলোমিটার। আড়াই ঘন্টায় চলে আসা যায় চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর ব্যবহার থাকেন।
বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮শ‘ ট্রাক মালামাল খালাস হয়ে থাকে। সেখানে বন্ধের পর রবিবার (১৬ মে) বিকেল পর্যন্ত ২শ‘ ট্রাক মালামাল লোড হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো কিছু ট্রাক লোড হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, দ্রুত পণ্য খালাস দিতে আমরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অনেক ভারতীয় ট্রাক পণ্য আনলোডের অপেক্ষায় বন্দরের টার্মিনালে অবস্থান করছেন। বন্দর থেকে পণ্য খালাস হওয়ার পর এসব পণ্য পর্যায়ক্রমে সেখানে রাখা হবে। রোববার সে হিসেবে অনেক আমদানিকারকরা বন্দর থেকে মালামাল খালাস নেয়নি। এর ফলে কিছুটা পণ্য জটের সৃষ্টি হয়েছে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)