UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ ৪:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাঝেমধ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকেই একটু ঘাবড়ে যান। তারপর স্যাংশন, ভিসানীতি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার স্পষ্ট কথা-এই মাটি আমাদের, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। তাই এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ভয়কে জয় করেই বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলেই এগিয়ে গেছে। ঝড়ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়েই নৌকা আজ তীরে থেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা মার্কা অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে। নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে। এই নৌকাই স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে।

শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন শেষে রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত বিশাল সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেকেই নাকি চোখে গণতন্ত্র দেখে না, গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন! যাদের জন্মই হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা অবৈধ ঘোষণা করেছে, তাদের হাতে গড়া দল কীভাবে গণতন্ত্র দেবে? তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না, বিশ্বাসও করে না। তারপরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে। বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে, ওইসব ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।

মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি, তারপর তো সূর্য ওঠে : প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ছয় ঋতুর দেশে আমরা তো দেখি কখনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্রোজ্জ্বল-বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আজ যারা আন্দোলনের নামে রোজই ক্ষমতা থেকে আমাদের ফেলে দিচ্ছে, আমি আপনাদের বলতে চাই-যারা এখানে উপস্থিত সবাইকে আমি বলব কবির ভাষায়-‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারাশশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে।’ মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি। তারপর তো সূর্য ওঠে। কাজেই ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।

লুটপাট ছাড়া দেশকে তারা কিছুই দিতে পারেনি : প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ’৭৫ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশকে কী দিয়েছে? নিজেদের আখের গোছানো, লুটপাট ছাড়া দেশকে তারা কিছুই দিতে পারেনি। এ সময়টা ছিল অন্ধকারের সময়। সেই অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব, আমরা তা দেখিয়েছি, প্রমাণ করেছি।

আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আজ একটা সাময়িক সমস্যা চলছে। আমাদের ওপর অর্থনৈতিক ধাক্কা এসেছে। এজন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাব। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করে খাব। কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির উন্নতি হয় না। দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের দেশসেবার সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশকে আর কারও কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে হয় না। সরকারপ্রধান আরও বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক উদ্বোধন করলাম-এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে। সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি করেছি। আমরা চাই-আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না : তিনি বলেন, জাতির পিতার এই স্বাধীন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছি। সরকারি চাকুরেদের মতো সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও যেন আলোকিত হয়, সেই উদ্যোগই নিচ্ছি। সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি। মেট্রোরেল করেছি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব উন্নয়ন জনগণের কল্যাণে করেছি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে এ কাজগুলো করে যাচ্ছি।

সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে : তিনি বলেন, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য আমাদের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নিজের হাতে টোল দিয়ে ওই সড়ক দিয়ে এখানে এসেছি। ফার্মগেট নেমে এখানে হাজির হয়েছি। আসতে মাত্র ১২/১৩ মিনিট সময় লেগেছে। বাকি অংশের কাজও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশ আরও এগিয়ে যাবে। আমরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বলিয়ারপুর থেকে কেরানীগঞ্জ-ফতুল্লা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা হলে যানবাহন ঢাকা শহরে প্রবেশ না করে এ অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে চলে যেতে পারবে। কেবল যোগাযোগব্যবস্থা নয়, সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এক্সপ্রেসওয়ে : রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের উন্নয়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে দেশের মানুষের জন্য ‘আরেকটি উপহার’ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন কিছুক্ষণ আগেই আমি করেছি। এটা আপনাদের উপহার হিসাবে দিয়ে গেলাম। দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘নতুন মাইলফলক’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা শহরের যোগাযোগব্যবস্থা, যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার, কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন করবে। এর ফলে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে, কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না, মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে পূরণ হবে। আমরা আজ যতদূর পর্যন্ত (সম্ভব) করলাম, পরবর্তী সময়ে বাকিটাও হয়ে যাবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন। এরপর ৮৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি প্রকল্পের একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি লি গুয়াংজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খুদে সংস্করণ উপহার দেন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, সংসদ-সদস্য হাবিব হাসান, মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ অন্য নেতারা। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ-সদস্য, কূটনীতিক এবং সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কোন দুঃখে পদত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী : সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন দুঃখে, কেন পদত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? কোন দেশের নির্বাচনি নীতিমালায় এটা (প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ) আছে? ডিসেম্বরে ‘ফাইনাল খেলা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পারবেন তো! ফাইনাল খেলায় জিততে পারবেন? পারবেন? ওদের (বিএনপি) হাতে শোকের পতাকা, এখন তারা শোক মিছিলে নামছে। আমাদের হাতে থাকবে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিজয়ের পতাকা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আগামী নির্বাচনে এগিয়ে যাব বিজয়ের সোনালি বন্দরে। প্রস্তুত আছেন তো? দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলতে হবে, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংকটে যেমন বঙ্গমাতা সহযোদ্ধা, সহকর্মী ছিলেন; তেমনই নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে সংকটে যখন শেখ রেহানাকে দেখি, তখন সেই পুরোনো দিনের হারানো স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। সংকটে তিনিও (শেখ হাসিনা) একা নন, পাশে বোন রেহানা দাঁড়িয়ে আছেন দৃঢ়চিত্তে পিতা মুজিবের স্বপ্নকে সামনে রেখে। উপস্থিত সবার উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, আবার দেখা হবে। আবার দেখা হবে বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বিজয়ের মিছিলে পতাকা হাতে আবারও দেখা হবে।

শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানাতে দেশের মানুষ উন্মুখ : বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, তারা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করবে। আপনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ করবেন, সেদিন আর দূরে নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে। আমি ঘুরে দেখেছি, আপনি ১৫ বছরে যেভাবে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন, মানুষ মনে করে, আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিনই বাংলাদেশ আলোকিত থাকবে, এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

ঊষার আলো-এসএ