বিমল সাহা: ভারতের সহযোগীতায় মোংলা বন্দরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৬ হাজার ১৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প বন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিতে পারে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে “আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্প” নামের এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইজিআইএস ইন্ডিয়া কন্সালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাঃ লিঃ এর মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষেও চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা এবং ইজিস ইন্ডিয়া কন্সালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রা: লি: এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সন্দিপ গোলাতি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী-এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার প্রনয় ভার্মা ও এজিস গ্রুপের সিইও লরেন্ট জারমেইনসহ দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মাংলা বন্দরের এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১হাজার ৫৫৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। তিনি বলেন, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল এক বছর। আর প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়ানো। আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কন্টেইনার হান্ডলিং ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, সিকিউরিটি সিস্টেমসহ সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, সার্ভিস ভেসেল জেটি নির্মাণ, আটটি জলযান সংগ্রহ, বন্দর আবাসিক কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সুবিধা (১৩টি সুউচ্চ ভবন), বন্দর ভবনের সম্প্রসারণ, মেকানিকাল ওয়ার্কশপ, যন্ত্রপাতিসহ সিøপওয়ে ও মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স নির্মাণ, দিগরাজে রেলক্রসিং ওভারপাস, মোংলা বন্দরের বিদ্যমান রাস্তা ছয় লেন পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও বহুতল কার ইয়ার্ড নির্মাণ করা।
অনুষ্ঠানে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হলে তা চট্টগ্রামের বিকল্প হয়ে উঠবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার কাছাকাছি চলে যাবে। এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে মোংলা বন্দর এগিয়ে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে মোংলা বন্দর সচল করার পদক্ষেপ নেয়। ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় এ বন্দরটিকে কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। বন্দরটি লোকসান কাটিয়ে লাভের ধারায় ফিরে এসেছে।
মোংলা বন্দরের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পশুর নদীর আউটারবারে ড্রেজিং করার ফলে হারবাড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে। ইনারবারে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে, যাতে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরে বর্তমানে জাহাজ, কার্গো, কনটেইনার ও গাড়ি হ্যান্ডলিং গড়ে ১৭, ১৯, ৮ ও ১৩ শতাংশ বেড়েছে। মোংলা বন্দরের জন্য কৌশলগত মাস্টারপ্ল্যানে যথাক্রমে ২০২৫, ২০৪০ ও ২০৭০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্য প্রস্তাব করেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৪০ সালের শেষ নাগাদ মোংলা বন্দরে কার্গো, কনটেইনার ও গাড়ি হ্যান্ডলিং যথাক্রমে ২, ১৫ ও ৩ গুণ বাড়বে।
মোংলা বন্দরের এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঊআ-বিএস