UsharAlo logo
রবিবার, ১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাসমাবেশ ঘিরে মুখোমুখি বিএনপি-সরকার

koushikkln
নভেম্বর ২৮, ২০২২ ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সরকার-বিএনপি নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে। এ কারণে উত্তপ্ত হয়েছে মাঠের রাজনীতি। সমাবেশের স্থান নিয়ে সরকার এবং বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপি বলছে, নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। সেজন্য নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার বিষয়ে অনুমতি চেয়ে তারা ডিএমপির কাছে আবেদনও করেছে। যদিও ডিএমপি এখনও অফিসিয়ালি কিছুই জানায়নি। অনুমতি না দিলেও নয়াপল্টনেই তারা সমাবেশ করবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, এমনিতেই রাজধানীজুড়ে যানজট লেগে থাকে। নয়াপল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মহাসমাবেশ হলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। রাজধানীর কোথায়ও সমাবেশের বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার আগে পুলিশ ওই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নেয়। সার্বিক বিবেচনায় নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই।

অপরদিকে, বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি কিছু শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের অনুমতি পাবে। তাদের পক্ষে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে দাবি ছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে কমিশনারকে বলে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা তাই।
তবে বিএনপি নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চায়নি, নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়েছেন। তাই, সেখানেই সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় দলের হাইকমান্ড।

গত শনিবার কুমিল্লার গণসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়াপল্টনে হবে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই হবে। বিএনপি নিয়ম মেনে সমাবেশের আবেদন করেছে। এখন সমাবেশের স্থান এবং অনুমতি দেওয়া তাদের (সরকারের) দায়িত্ব। আমরা ১০ বিভাগীয় শহরে যে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিলাম, তার শেষ সমাবেশটা হবে ঢাকায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করার বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ডিসেম্বরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। এসবের কারণে সেখানে বিশাল মঞ্চ ও ব্যাপক সাজসজ্জা করা হয়েছে। ১১ নভেম্বর যুবলীগের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে যে বিশাল আকারের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চেই একের পর এক আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচি-সম্মেলন চলছে। ২৫ নভেম্বর স্বাচিপ ও ২৬ নভেম্বর আওয়ামী মহিলা লীগের সম্মেলন হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এর মাঝে ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ছাড়াও ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ। সুতরাং এ অবস্থায় ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে বলাটা ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের লাগাতার সম্মেলন থাকায় বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না, বিএনপি নেতাদের এমন যুক্তির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বার বার বলছি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে সরকার কোনও বাধা দেবে না। কিন্তু আগুন বা লাঠি নিয়ে খেলতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যেন সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন দুদিন এগিয়ে ৬ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। আর রাজধানীর মানুষজন রয়েছে আতঙ্কে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ করা প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি রয়েছে ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর গণসমাবেশ। এরপরই ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ। এই সম্মেলনের বিষয়ে আজ (সোমবার) বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান সার্বিক অবস্থা ও সমাবেশের স্থান নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা বলছেন, সরকার যেহেতু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছে, নয়া পল্টনের ব্যাপারেও রাজি হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ আমরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই শান্তিপূর্ণভাবে করতে চাই। এ ব্যাপারে সরকারের কোনও টালবাহানা সহ্য করা হবে না।

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সমাবেশের স্থান, সময় বিষয়ে আমরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে বিস্তারিত বলেছি। আমাদের কাছে তারা বিকল্প জায়গার নাম চেয়েছিলেন। আমরা একটা স্থানের কথাই বলেছি, সেটা নয়াপল্টন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেবেন। আসলে তারা চাচ্ছেন, পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক হোক। কিন্তু বিএনপি তাদের ফাঁদে পা দেবে না। আমরা নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। এটাই ফাইনাল।