UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজাকার কমান্ডার আলি হোসেনের বিচার দাবি

pial
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ ১:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি : মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ,বসত বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এর অভিযোগে বর্তমানে খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকার বাসিন্দা, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ গ্রামের আলী হোসেন এর বিরুদ্ধে গত ৩ আগষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ও গত ৮ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলা প্রশাসক এর নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ফকিরহাটের নলধা মৌভোগ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ দেলোয়ার শেখ।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মোঃ আলি হোসেন উরফে আলিম উদ্দিন শিকদার (দফাদার) পিতা ফটিক শিকদার উরফে আজিজ সিকদার মৌভোগ মধ্যপাড়া জিল্লাল মোড়লের স্কুলের পাশে সুরে মাষ্টার ও হিরো বালা ঠাকুরকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর রাজাকার আলী হোসেনের নেতৃত্বে মালশা বাজার, মৌভোগ, উত্তর মৌভোগ, কামটা, নলধা, আড়ুয়াডাঙ্গা ঢুকে ব্যাপক লুটপাট চালায়, অভিযোগকারী বসতবাড়ি সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফার হাওলাদার, হানিফ মোল্লা, মোনতাজ শেখ,সহ বেশ কয়েকজনের বসত বাড়িতে রাজাকার আলী হোসেন আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বসতবাড়ির মালামাল লুটপাট করে।

আলী হোসেন ছিলো বাগেরহাট রাজাকার কমান্ডার রজব আলী ও সিরাজউদ্দিন এর একান্ত সহযোগি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিনই বাগেরহাট ডাকবাংলোতে রাজাকার কমান্ডার রজব আলী গনপিটুনিতে মারা যায়। এবং আলী হোসেন পালিয়ে খুলনার ফুলতলা উপজেলার খানজাহান আলী থানা এলাকার আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডে এসে বসবাস শুরু করে।
গত ২৫ জুলাই বিভিন্ন পত্রিকায় রাজাকার আলী হোসেনের মুক্তিযোদ্ধের সময় দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলো বলে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে রাজাকার আলী হোসেন ২ দিন পরেই ২৭ জুলাই আলী হোসেন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন লোক নিয়ে এসে মালশা বাজারে যায় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এসব বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখার অনুরোধ করে, রাজি না হলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেই। তাতেও রাজি না হলে মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে।

পরবর্তিতে স্থানিয় ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আমিনুর রহমান ও ইউপি সদস্য মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন এর নিকট মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় সে রাজাকার ছিলোনা মর্মে পত্যায়ন আনতে যাই, সেখান থেকে সেটা না পেয়ে বেশ ক্ষিপ্ত হয় , রাজাকার আলী হোসেনর পুত্র মালেশিয়া প্রবাসী মোঃ লিটন বিদেশে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার শেখকে হুমকি দিচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগে জানানো হয়।
অভিযোগ এর সুত্রে আরো জানা যায় ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ৬ নং নলধা মৌভোগ ইউনিয়ন থেকে ২ জন রাজাকার এর তালিকা দেওয়া হয়েছিলো তারমধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডে ছিলো মোঃ শাহাজান শেখ (ওরফে ওমুর) এবং ৩ নং ওয়ার্ডে আলিমউদ্দিন সিকদার উরফে আলী হোসেন (দফাদার) পিতা ফটিক সিকদার উরফে আজিজ সিকদার।

রাজাকার আলী হোসেন সুরে মাষ্টার নামে যাকে হত্যা করে তার কাছে তৎকালীন সময়ে সে প্রাইভেট পড়তো। ফকিরাহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আলতায় হোসেন টিপু বলেন, অনেক বিলম্বে হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে। এর মাধ্যমে ইতিহাসের দায়মুক্তি হচ্ছে।

তিনি বলেন সেদিনের দৃশ্যগুলো আজো আমার চোখে ভাসছে, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ বাহিনীর সদস্য আলী হোসেন পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর ছায়াতলে থেকে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ এলাকাতে গুলি করে সুরে মাষ্টার, হিরো বালা ঠাকুর কে হত্যা , মা-বোনদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিলো তা তরুণ প্রজন্ম শুনলে রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠবে।
অকথ্য যৌন নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং অনেকের সম্পদ লুটপাটসহ মানবতা বিরোধী সকল অপরাধ সংগঠিত করেছিলো আলি হোসেন। তিনি বলেন, রাজাকার আলী হোসেন বর্তমানে খুলনার ফুলতলা উপজেলাধীন খানজাহান আলী থানা এলাকার আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডে বসবাস করছে , এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ শেখ আকরাম হোসেন বলেন আলী হোসেন গিলাতলা এলাকাতে বিয়ে করেছেন এবং এখানে পরিচয় গোপন করে বসবাস করতেন ফকিরহাটের লোকজন এখানে এসে খোজ খবর নিলে বিষয়টি এতদিন পর জানাজানি হয় , সে যে ওই এলাকাতে রাজাকার এর কমান্ডার ছিলো এতদিনে আমরা জানতে পারিনি অত্যন্ত গোপনে সে এখানে পরিচয় গোপন করে বসবাস করতো।

অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার শেখ বলেন, একাত্তরে নির্যাতিত অসংখ্য নারী স্বাধীন দেশে ঘর বাধার স্বপ্ন হারিয়েছে। অনেকে কুমারী মাতা হয়ে সমাজের কাছে উল্টো লাঞ্ছিত হয়েছে। অথচ সেই কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার এখন খুলনার খান জাহান আলী থানার গিলাতলাতে থেকেই বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন প্রকৃত অর্থে সময় এসেছে সেই অপরাধী রাজাকার আলী হোসেনের বিচার করার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট তদন্তপুর্বক প্রচলিত আইন অনুযায়ি রাজাকার আলী হোসেনের বিচার এর দাবি জানান তিনি । এদিকে স্থানিয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যেগে আগামি ১৬ সেপ্টেম্বর মালশা বাজারে রাজাকার আলী হোসেন ও তার প্রবাসী পুত্র লিটন বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ, আলী হোসেন এর মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকান্ড তদন্তপুর্বক গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠিত হবে।

(ঊষার আলো-এফএসপি)