UsharAlo logo
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলে ঋণ-দাদনে জর্জরিত জেলেদের করুণ জীবন

usharalodesk
অক্টোবর ২৮, ২০২৪ ১২:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় জেলেদের গলার কাঁটা ঋণ-দাদন। এ পেশায় রয়েছে জীবনের ঝুঁকি, দুঃখ-কষ্ট-আহাজারি। মরেও রক্ষা হয় না তাদের। পরিবারকেই টানতে হয় ঋণের বোঝা। জেলে সুরক্ষা আইনটিও সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত নয়। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিকমতো পৌঁছায় না প্রণোদনা। এই পেশার মানুষদের ভাগ্যোন্নয়নে নেই সরকারে কোনো পরিকল্পনা।

টানা তিন মাস পর ঘরে ফিরেছেন নাজির মাঝি। মুখভরা হাসি, ব্যাগ ভরা টাকা আর থলে ভরা বাজার-সদাইয়ের বদলে তিনি এসেছেন খালি হাতে। অথচ সুখের জীবন বলতে যা বোঝায়, তার সবই ছিল নাজিরের।

রায়পুরর উত্তরচরবংশী ইউপির জেলেপল্লীর নাইয়াপাড়ার বড় নাইয়া বাড়িতে ছিল তার সংসার। নিজের আয়ের পাশাপাশি আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ট্রলার বানান। কেনেন জালসহ অন্য সব সরঞ্জাম। সেটা নিয়েই নদী-সাগরে মাছ ধরে চালাতেন জীবন। কিন্তু বছর দুয়েক আগে নাজিরের মাছধরার ট্রলারটি ইঞ্জিনসহ জ্বলে নষ্ট হয়। পাল্টে যেতে থাকে তার জীবনের অধ্যায়।

নাজির মাঝি আবার হাত পাতেন অন্য আড়তদারের কাছে। তিনজনের কাছ থেকে দাদন নেন ১৫ লাখ টাকা। তাতেও কুলায় না। স্ত্রী হাওয়া বেগমকে দিয়েও সমিতি-এনজিও মিলিয়ে সাতটি সংস্থা থেকে আরও ২২ লাখ টাকা ঋণ নেন। গড়ে তোলেন আরেকটি ট্রলার। কিন্তু এখন আগের মতো মাছ ওঠে না জালে। আয়-রোজগার প্রায় শূন্যের কোঠায়।

গত ১০ অক্টোবর খালি হাতে বাড়ি ফেরার পরের দিন বিকালে ঘটে আরেক ঘটনা। রায়পুরের চরপাগলা গ্রামের সুদ কারবারি কামাল ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে এসে নাজিরের ছেলে রিয়াদকে (২৩) ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার অপরাধ ৭৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে এক লাখ ২৫ হাজার দিয়েছেন। এখনো ৫০ হাজার টাকা পাওনা দাবি। মারধর করা হচ্ছে শুনে রিয়াদকে দেখতে গেলে পিটুনির শিকার হন আত্মীয় আক্তার হোসেনও। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশের হস্তক্ষেপে রিয়াদকে উদ্ধার করা হয়।

সুদ কারবারি কামাল বলেন, ‘রিয়াদ দুই-তিন বছর আগে টাকা নেওয়ার পর প্রথমে কথামতো পরিশোধ করেছিল। তার কাছে এখনো ৫০ হাজার টাকা পাওনা, দিচ্ছিল না। এজন্য তাকে ধরে এনেছি। মারধর করা হয়নি।’

অফিসাররা কিস্তির টাকার জন্য এলে ভাত ফেলেও দৌড়ে পালাই। রাত ১০-১১টা পর্যন্ত তারা বসে থাকেন। চলে গেলে আবার ঘরে আসি। কী করবো-ঋণগ্রহীতা রহিমা এখানেই শেষ নয়, নাজির মাঝি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভোলার চরফ্যাশনের আড়তদার সেলিম ও আসাদ আগের দাদনের ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওনার কারণে ট্রলার-জালসহ সবই রেখে দিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে তাদের সঙ্গে আমার দেড় কোটি টাকার ব্যবসা হয়। দাদনদাররা কমিশন পান ২৫ লাখ টাকা।’

তিনি জানান, তিন মাস আগে ১৪ জেলেকে নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ২২ লাখ টাকার মাছ পান। সেই মাছ বিক্রি করে জেলেসহ অন্যদের পাওনা পরিশোধ করার পর বেঁকে বসেন আগের আড়তদার সেলিম ও আসাদ। তারা জোর করে ট্রলার-জাল রেখে দেন। পরে তিনি এলাকার অন্য জেলেদের ট্রলারে করে খালি হাতে ফিরে এসেছেন।’

এখন সমিতি-এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তি আর আড়তদারদের দাদনের টাকার ভাবনা সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে চার ছেলে, তিন মেয়েসহ নাজির-হাওয়া দম্পতিকে।

আরেক দিনের ঘটনা। নাজির মাঝির ঘরে ৮-১০ জন নারী-পুরুষ দাঁড়ানো। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘প্রত্যাশী’র ‘জুঁই’ শাখার (সমিতি) সাপ্তাহিক কিস্তি সংগ্রহ চলছে। এই সমিতির সদস্য ৬৫ জন। মাঠকর্মী আছমা আক্তার একে একে গ্রাহকদের কিস্তির টাকা গুনে নিচ্ছেন ও বইতে লিখছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে নাজির মাঝির স্ত্রী হাওয়া বেগম।

তার কাছে জানা যায়, বিয়ের পরপরই প্রায় ২৫ বছর আগে প্রথমবারের মতো তিনি সদস্য হন কোডেক নামের এনজিওর। তখন পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেন হাওয়া। সেখান থেকেই ঋণের জালে জড়ানো। ২০১৮ সালে প্রত্যাশী থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিলেও এখন তা দুই লাখে দাঁড়িয়েছে। গত দুই বছর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা নিলেও এখন তা দেড় লাখ। উদ্দীপন থেকে ৪০ হাজার নিলেও এখন চার লাখ, সোপিরেট এনজিও থেকে ৫০ হাজার নিলেও এখন দেড় লাখে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আশায়ও আছে তার দেড় লাখ টাকা দেনা। আবার প্রতিটি সমিতিতে কিছু সঞ্চয়ও রয়েছে।

হাওয়া বেগম জানান, গত মে মাসে ঘরের ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে আশার কিস্তি দিয়েছেন। আগস্টে টেলিভিশন বেচেন চার হাজার টাকায়। ৯০ হাজার টাকা শতাংশ দরে ৬ শতাংশ জমিও বেচতে হয়েছে ঋণ শোধের জন্য। ‘এখনো অনেক কাবজাবে (যন্ত্রণায়) আছি। ঋণের জামিনদাররা আটকে রাখে, গালমন্দ করে। বিয়ের উপযুক্ত মেয়েটাকেও অন্যের বাড়িতে কাজে দিতে বাধ্য হয়েছি।’

নদী-সমুদ্রে মাছ কম পাওয়ার কারণে জেলেরা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। পাওনাদারের ভয়ে অনেকে এলাকাছাড়া।

একই বাড়ির মনোয়ার দেওয়ানও স্ত্রী রহিমাকে দিয়ে এনজিও ‘সোপিরেট’ থেকে এক লাখ, ‘সিদীপ’ থেকে ৯০ হাজার, কোডেক থেকে এক লাখ, ব্র্যাক থেকে ৭০ হাজার, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সাদা স্ট্যাম্পে সই দিয়ে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে। এর কিছু দিয়ে আগের দেনা পরিশোধ আর কিছু দিয়ে মাছধরা জাল কিনেছেন জেলে মনোয়ার দেওয়ান। এসব জালের একেকটার দাম দুই লাখ থেকে ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

এই প্রতিবেদককে রহিমা বলেন, ‘অফিসাররা কিস্তির জন্য এলে ভাত ফেলেও দৌড়ে পালাই। রাত ১০-১১টা পর্যন্ত তারা বসে থাকেন। চলে গেলে আবার ঘরে আসি। কী করবো!’

রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউপি সদস্য (মেম্বার) জাহাঙ্গীর বকসি বলেন, ‘নদী-সমুদ্রে মাছ কম পাওয়ার কারণে জেলেরা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। পাওনাদারের ভয়ে অনেকে এলাকাছাড়া।’

চরবংশী গ্রামের জেলে আবদুল বারেক দেওয়ান প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম কোডেক থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেন। তা দিয়ে কিছু জাল আর সংসারের সওদা কিনেছিলেন। এর পর থেকে বিভিন্ন সমিতি-এনজিওর ঋণ বেড়েই চলে। মাঝে একসময় সব দেনা শোধ করে স্বস্তিতে ছিলেন। এখনো তিনি এনজিও ‘সুপ্রিম’ ও ‘প্রত্যাশী’র কাছে এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা ঋণী। ‘মরলেও কিস্তি মাফ নাই’- হতাশার সুরে বলেন বারেক দেওয়ান।

২০২২ সালেও নাইয়াপাড়ার আলম মাতাব্বরের ১৭-১৮ লাখ টাকা দামের দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছিল। হঠাৎ একটি ট্রলারের ইঞ্জিন পুড়ে যায়। একবার পুড়লে আর মেরামত করে পোষায় না বলে বিপদে পড়ে যান আলম। দিন দিন দায়-দেনা বাড়তে থাকে। কয়েক মাস পর তিনি দুটি ট্রলারই বিক্রি করে দেন। এখন রায়পুর পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আলমের ভাষ্য, ট্রলার বেচার আগে-পরে মিলিয়ে তিনি চারটি এনজিও-সমিতি থেকে পাঁচ লাখ, হাজারে ১০ টাকা হারে সুদে স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বরের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নেন। টাকা দিতে দেরি হলেই পাওনাদাররা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।

একই জেলেপাড়ার মোখশেদুল রহমান মাছ ধরে ফেরি করে লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে থাকেন। তার নামে গ্রাম্য দুই পাওনাদার লক্ষ্মীপুর জেলা আদালতে আলাদা মামলা করেন। এরপর তিনি জাল-নৌকা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা দেনা শোধ করে মামলা থেকে মুক্তি পান। এখনো তিনি আটটি এনজিও-সমিতির কাছে ১৫ লাখ টাকা দেনা।

দেনা প্রসঙ্গে মোখশেদুলের জবাব, ‘কী করবো আমরা ! একজনের কাছ থেকে নিয়ে আরেকজনকে বিদায় করি।’

রায়পুরের উত্তর চরবংশী নাইয়াবাড়ির রমজান আলী এক জীবনে দেনা পরিশোধ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখন তার বসতি বরিশালের গোবিন্দপুর চরে। রমজান বলেন, ‘২০১৮ সালে নদীতে আমার নৌকা ডুবে যায়। এরপর থেকে দেনা আর দেনা। আমি এখনো ভোলার চরফ্যাশনের কাদির বয়াতির ঘাটের দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা, রামগতির মিজান বেপারীর ৪০ হাজার, মতির হাটের মিলন ভান্ডারির ১৫ হাজার, রায়পুরে আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাটে ৪০ হাজার টাকা দেনা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনা উপকূলের জেলে-অধ্যুষিত রায়পুর উপজেলায় কোডেক, সোপিরেট, প্রিজম বাংলাদেশ, ব্যুরো বাংলাদেশ, সিদীপ, উদ্দীপন, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্র্যাক, প্রত্যাশী, টিএমএসএস, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও রিকসহ শতাধিক এনজিও-সমিতি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা ঋণসহায়তার পাশাপাশি গ্রাহকদের সঞ্চয়ও সংগ্রহ করে থাকেন।

ব্যুরো বাংলাদেশের রায়পুরের খাসেরহাট শাখার হিসাবরক্ষক সেলিম মুজাহিদ বলেন, জেলেদের মধ্যে যারা হিসাব করে চলে, তারাই লাভবান হয়। জেলেরা ভালো আছে, তাও বলা যাবে না। নদীতে অভিযান চলাকালে আমাদের কিস্তি সংগ্রহ কার্যক্রম শিথিল রাখা হয়। দুই লাখ টাকার নিচে কেউ লোন নিলে তার চেক বা স্ট্যাম্প লাগে না।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের কাঞ্চন মিস্ত্রির স্ত্রী কুলসুম বেগম দক্ষিণ আইচা গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থা থেকে সম্প্রতি ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর তিনি সপ্তাহে আড়াই হাজার করে ১৩ কিস্তিতে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বন্যাসহ চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে কিস্তি দিতে না পারায় এনজিওকর্মী হাসিনা বেগম ও ম্যানেজার মো. শামীম গত ২১ সেপ্টেম্বর কুলসুমের বাড়িতে যান। টাকা না পেয়ে তারা কুলসুমের গোয়ালঘর থেকে একটি গাভি নিয়ে যান। গাভিটির চার মাসের একটি বাছুর ছিল। গরু টেনে নেওয়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে তোপের মুখে ওই সংস্থা থেকে হাসিনাকে বরখাস্ত করা হয়।

এনজিও ‘প্রত্যাশী’র মাঠকর্মী আছমা আক্তার বলেন, ‘নারীদের সব সময় বাড়িতে পাওয়া যায় বলেই তাদের সদস্য করে লোন দেওয়া হয়। কেউ এক লাখ টাকা লোন নিলে ৪৬ কিস্তিতে মোট এক লাখ ১২ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই এনজিওকর্মী বলেন, ‘তবে জেলেদের উন্নতি-অবনতি বোঝা যায় না। আমরাও চাই কাউকে একবারের বেশি লোন না দিতে। কিন্তু তা হচ্ছে না।’

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা এনজিও প্রত্যাশীর রায়পুরের হায়দরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম তুহিন গত ১০ জুলাই বিকালে চরবংশীর বড় নাইয়া বাড়িতে মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে আসেন সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে। জেলে খোরশেদ হাওলাদারের ঘরে বসে নিজেদের সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের কথা বলছিলেন জেলে পরিবারের সাতজন নারী-পুরুষ। এনজিও কর্মকর্তা রাশেদ জানালার ফাঁক দিয়ে পাওনাদার দুই নারীকে ডেকে নেন। দ্রুত টাকা দিতে চোখ রাঙিয়ে গেলেন তিনি।

চরাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করে ‘কোডেক’। এই এনজিওর মোল্লারহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবদুল হাই বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক ঋণের বিপরীতে বিমা করা থাকে। এর মধ্যে কোনো গ্রাহকের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে আমরা মূলধনসহ পাওনা টাকা মওকুফ করে দিই। পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য তাৎক্ষণিক পাঁচ হাজার টাকা করে দিই। তবে গ্রাম্য কিছু মহাজন-দাদনদারের বিরুদ্ধে মৃত ঋণগ্রস্ত জেলেদের পরিবারকে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ শোনা যায়।’

গ্রামীণ ব্যাংক খাসেরহাট শাখার কর্মকর্তা মো. মানিক বলেন, ‘এখানে সদস্য ৪০০ জনের মধ্যে ৩৪০ জনই ঋণগ্রহীতা। মাঠে আমাদের এক কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ। অভাবের কারণে গ্রাহকদের কিস্তি দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাদের কাছে বারবার ধরনা দিতে হয়।’

রায়পুরের চান্দারখাল মাছঘাটের মাহমুদ আলী, হাজিম খা ও জয়নালসহ ১২ জন জেলের সঙ্গে। তাদের সবার চোখে-মুখে চরম হতাশার ছাপ। জাল বোনার ফাঁকে ফাঁকে তারা জানান, এখন নদীতে তেমন মাছ নেই। নিজেদের শ্রমের মূল্য আর জ্বালানি তেলের খরচও ওঠে না। অন্য কাজও তারা জানেন না।

দিন দিন খরচ আর দেনার খাতা লম্বা হচ্ছে জানিয়ে ৫০ বছর বয়সি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এজন্যই চরগাজী গ্রামের মিরাজ, চরলক্ষ্মী গ্রামের নিজাম রাতে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গেছেন। মিরাজ ৫০ লাখ, নিজাম ৩০ লাখ টাকা দেনা। তারা নিজেদের ট্রলার ফেলেই চলে গেছেন। কিচ্ছু করার নেই।’

রায়পুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘যেসব জেলে নৌকা-জালের মালিক, শুধু তারাই দাদন পায়। সাধারণ জেলেরা দাদন পায় না। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা সহায়তার জন্য আবেদন করলে তা পর্যালোচনা করা হয়।’

উল্লেখ্য, সরকার ঘোষিত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বাজারজাত, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ সময় আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা।

মৎস্য বিভাগ থেকে জেলার ৩৯ হাজার ৭৫০টি জেলে পরিবারের জন্য ৯৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

ঊষার আলো-এসএ