ঊষার আলো রিপোর্ট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা উপকূলীয় চরাঞ্চলে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের বেশিরভাগ ক্ষেতই নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার রাত থেকে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপির এলাকার আমন ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা রোপা আমন ধানের। এদিকে এমন ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়ে। ফলে অনেকটাই ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ১৫ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আগাম জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান কর্তন হয়েছে; যার গড় ফলন ৬ দশমিক ৪৫ টন (ধানে)। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ হাজার ১৭০ টন; যা গত বছরের তুলনায় বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য আমন মৌসুমে কৃষককে সরকারি প্রণোদনা (বীজ ও সার) দেওয়া হয়েছে।
চরকাছিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল শিকদার বলেন, কয়েক মাস ধরে যে অতিবৃষ্টি হলো এতে অনেক নিচু অঞ্চলের জমিতে ধানের চারা ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে ঝড়ে ধান গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শীষে যে দানা রয়েছে তা এখনো শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে।
জালিয়ারচর গ্রামের কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, চলতি মৌসুমে জমিতে তিন জাতের রোপা আমন ধান রোপণ করি। প্রথম দিকে পাকায় ধান গাছের ক্ষতি করলে পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কয়েক দিন পর ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। প্রবল বাতাসে পাকা ধান নুয়ে পড়ছে এবং ঝরে পড়েছে অনেক ধান। এছাড়া পাকা ধানখেতে পানি জমে গেছে। এখন ধান কাটা যেমন কষ্টের তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে দিগুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসল নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
ক্যাম্পের হাট কৃষক যতীন্দ্র দাশ জানান, তিনি বর্গা নিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ঝড়ো হাওয়ায় ধান গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়; কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই এ দুর্যোগ কেটে যাবে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে বৃহস্পতিবার প্রস্তুতিমূলক সভা করেন জেলা প্রশাসন। সিভিল সার্জন আহমেদ কবির জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের ৬৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট থেকে বরিশাল-ভোলা রুটের সব নৌযান এবং লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ উপকূলের আরও কাছে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় উপকূলের মানুষ। তবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে দানার তাণ্ডব চালানোর আশঙ্কা নেই।
লক্ষ্মীপুরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের সমতলে প্রবেশ করার কোনো আশঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড় দানা বুধবার রাত ৩টার দিকে শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃহস্পতি-শুক্রবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। বাতাসের গতিবেগ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় দানা এখন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের সমতলে আসার কোনো আশঙ্কা নেই। মধ্যরাতে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে।
তিনি জানান, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
ঊষার আলো-এসএ