UsharAlo logo
সোমবার, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকচালককে অপহরণের পর হত্যা ও গুমের রহস্য উন্মোচন

usharalodesk
এপ্রিল ২৬, ২০২১ ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকচালককে অপহরণের পর হত্যা ও গুমের রহস্য উন্মোচন করে চালকের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার ১ মাস পর ২৪ এপ্রিল শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পারুয়া ইউনিয়নের একটি ডোবার মাটি খুঁড়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।
একই দিন দুপুরে ঘটনার মূল হোতা মো. নেজাম ওরফে মিজানকে (২৬) সন্দ্বীপ থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত নেজাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা হাজীপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত নেজাম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজিজুলকে হত্যা ও মৃতদেহ গুমের ঘটনার বীভৎস বর্ণনা দিয়েছে। মূলত পারিবারিক শত্রুতার জের ধরেই এ হত্যার পরিকল্পনা করে নেজাম। ঘটনার দিন বালু আনার নাম করে আজিজুলকে কৌশলে রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়া এলাকার এক নিভৃত জায়গায় নিয়ে গিয়ে ট্রাকের রেঞ্জ (যন্ত্রাংশ) দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। হত্যার পর ১ দিন পাহাড়ে মৃতদেহ লুকিয়ে রাখার পর বন্ধু আজিজুলের জানাজা ও দাফনের চিন্তা আসে নেজামের মাথায়। সে অনুযায়ী গত ২৬ মার্চ রাতে তিনি মৃতদেহটি কাঁধে করে রাঙ্গুনিয়া থানার চৌধুরীখিলস্থ নাজিম প্রফেসরের পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবার সামনে নিয়ে আসে। সেখানে নেজাম একাই মৃতের জানাজা পড়ে এবং কবর দেওয়ার মতো করে ডোবার তলদেশে লাশটিকে লুকিয়ে রাখে। এছাড়া নেজাম ক্ষমা চান বন্ধুর লাশের হাত ধরে!
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের আল আমিন পাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে ট্রাকচালক আজিজুল হক (২৭) নিখোঁজ হন। ২৬ মার্চ আজিজুল হকের বাবা রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হারানো জিডি করলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল আজিজুল হকের মামা হায়দার আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে।
তদন্তে আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি প্রযুক্তির সাহায্যে কক্সবাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ঘটনার ১৫ দিন পর সূত্র ধরে কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকা থেকে ২’জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা নেজামের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে নেজামের অবস্থান সন্দ্বীপে শনাক্ত করে। শনিবার সন্দ্বীপ থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়।
আটক হওয়ার পর হত্যার কথা স্বীকার করলেও হত্যার পদ্ধতি এবং মৃতদেহের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে থাকে নেজাম। প্রথমে তিনি দাবি করে যে, আজিজুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে এবং তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণ এবং প্রশ্নবাণের মুখে শেষপর্যন্ত নিজে খুন করার কথা এবং মৃতদেহের সঠিক অবস্থান জানাতে বাধ্য হন তিনি। পরে তার দেখানো ডোবা থেকে আজিজুলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, নেজামের স্ত্রীর সঙ্গে আজিজুলের পরকীয়া প্রেম রয়েছে, মূলত এই সন্দেহ থেকেই আজিজুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেজাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল হককে হত্যার দোষ স্বীকার করে ২৫ এপ্রিল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আদালতে মো. নেজাম ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে আজিজুলকে হত্যা ও গুমের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে। পাশাপাশি তিনি নিজ স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে বলেও জবানবন্দিতে দাবি করে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেছে, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ ১ মাসের নিরবচ্ছিন্ন এবং নিবিড় তদন্তে আমরা প্রায় কোনো ক্লু না থাকা এ ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। সেই মোতাবেক ঘটনার মূল হোতা নেজামকে আটক এবং তার দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা নিরূপণের জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

(ঊষার আলো- এম. এইচ)