আওয়ামী লীগ আমলের ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নের নামে রীতিমতো ‘সাগরচুরি’ হয়েছে। বিশেষ করে সাত হাজার কোটি টাকার রোলিংস্টক (ইঞ্জিন কোচ ও যন্ত্রাংশ) কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। কয়েকজন মন্ত্রী ও রেল মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চিহ্নিত চক্র নির্বিঘ্নে লুটে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ। বিভিন্ন সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রথম নয়, হাসিনা সরকারের আমলেও রেলের অর্থ লোপাটের প্রমাণ পায় দুদক। কিন্তু সে সময় আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রেলের উন্নয়নের নামে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি ইঞ্জিন ক্রয়ে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কোচ এবং যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় বাকি ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়। তবে এ সময় নিম্নমানের ইঞ্জিন ও রেলের যন্ত্রাংশ ক্রয় খাতে উচ্চহারে কমিশন বাণিজ্য হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাবেক তিন রেলপথমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন নূরুল ইসলাম সুজন। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে পরিচিত সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক ও জিল্লুল হাকিম। তবে মুজিবুল হকের পিএস গোলাম কিবরিয়া গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাবন্দি। এছাড়া স্বল্পসময়ের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেও কমিশনের টাকায় পকেট ভারী করেছেন কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের সাবেক মন্ত্রী, সচিব ছাড়াও দুর্নীতি সিন্ডিকেটে সাবেক একাধিক মহাপরিচালক (ডিজি), এডিজি ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি)-সহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে দুদকের মামলায় একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে। কয়েকজন বর্তমানে পলাতক। একজন সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সংগ্রহের জন্য এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। রেলভবনে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রমও চলমান। অনুসন্ধান টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩০টি ইঞ্জিন কেনাকাটায় চরম দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। চুক্তি অনুযায়ী তিন হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই ইঞ্জিনগুলো প্রাক-জাহাজীকরণ সমীক্ষা (পিএসআই) সনদ ছাড়াই পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এলে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খালাস করতে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক নূর আহমেদ হোসেনকে প্রকাশ্যে চাপ ও গালমন্দ করা হয়। পরে চায়না সার্টিফিকেট অ্যান্ড ইনস্পেকশন কোম্পানি (সিসিআইসি) ওই বছরের ১২ আগস্ট একই দিনে দুটি পিএসআই সনদ দেয়, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ট্রেন পরিচালনায় ইঞ্জিন অতিগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আধুনিক ইঞ্জিন ক্রয়ের নামে যে অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাট করা হয়েছে-এতে ট্রেন পরিচালনা পদে পদেই ব্যাহত হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগও প্রমাণিত। আমরাও দুর্নীতিবাজ আর লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুদকেও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কয়েক বছর না যেতেই ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনগুলো ফেইলিউর হচ্ছে। লুটপাটের লক্ষ্যে ক্রয় করা ইঞ্জিনগুলো মেরামতেও ব্যয় বাড়ছে। শুধু ইঞ্জিন নয়, রেলের সার্বিক উন্নয়নের নামে ব্যাপক দুর্নীতির জেরে প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তাব্যবস্থাও। তবে আমরা যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কাজ করছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের সময় কেনা ইঞ্জিনগুলো ফেইলিউরের দিক দিয়ে সেরা। ২০০৯ সালের আগে যেসব ইঞ্জিন ১১ থেকে ১৫ কোটি টাকায় কেনা-সেগুলোর কার্যক্রম ভালো। একেকটি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হলেও ওইসব ইঞ্জিনের অধিকাংশই ৩০ থেকে ৪০ বছর যথাযথ গতি নিয়ে সব সেকশনে চলছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে কেনা ইঞ্জিনগুলো পদে পদেই ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ২০১২-২০১৪ সালে ২৬টি, ২০২০-২০২১ সালে ৩০টি, ২০১১-২০১৫ সালে ৩০টি এবং ২০২২ সালে ৪০টি ইঞ্জিন ক্রয় করা হয়। প্রায় ৩৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ইঞ্জিনগুলো ঘিরে রেলওয়ের পাঁচ মন্ত্রী, সচিব, সংশ্লিষ্ট ডিজি, এডিজি (আরএস), পিডি, ঠিকাদার, সংসদীয় কমিটির সভাপতি-সদস্যরাসহ রাজনৈতিক (আওয়ামী লীগ) সন্ত্রাসীচক্রের সংশ্লিষ্টরা কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে। ক্রয় করা ইঞ্জিনগুলো ১২০ থেকে ১৫০ মাইল গতিতে চলার কথা থাকলেও এসব ইঞ্জিন গড়ে ৬৭ কিলোমিটার গতি নিয়ে চলছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের রোলিংস্টক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৫ বছর ধরে যেসব ইঞ্জিন ক্রয় করা হয়েছে-এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির ৩০টি ইঞ্জিন উল্লেখযোগ্য। প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ইঞ্জিন মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় (চলাচলের অনুপযোগী) হয়ে পড়ে আছে। অর্থাৎ প্রথম পর্বে আনা ১০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৬টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আনা ২০টির মধ্যে ১৪টি বসিয়ে (অকেজো-ত্রুটি) রাখা হয়েছে। একই অবস্থা বাকি ইঞ্জিনগুলোরও। রোলিংস্টক দপ্তরে লিপিবদ্ধ (খাতায়) অনুযায়ী ঈদযাত্রায় ১০ দিন, এসব ইঞ্জিন ২৮ বার ফেইলিউর হয়েছে। এতে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে ৫০ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। ২০০৯ সালের আগে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ইঞ্জিনগুলোর কার্যক্ষমতা ভালো।
এছাড়া ক্রয় করা ইঞ্জিনের সঙ্গে লোডবক্স টেস্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়নি। রেলওয়ের একাধিক টিমের হুন্দাই রোটেমের কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিসিআইসি ইঞ্জিনগুলো ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কখনোই রেলওয়ের টিমকে পরিদর্শনে নিয়ে যায়নি। এ সুযোগে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে ইঞ্জিনগুলো তৈরি করে হুন্দাই রোটেম।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ইঞ্জিন ক্রয় প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নূর আহমেদ হোসেন বলেন, ‘ইঞ্জিনগুলো চুক্তি অনুযায়ী প্রদান করা হয়নি বলে আমি তা গ্রহণ করিনি। ওই সময়ের রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। আমি রাজি না হওয়ায় গালমন্দ করা হয়। একপর্যায়ে আমাকে পিডি থেকে বাদ দিয়ে বদলি করে দেয়। পরে তাদের পছন্দের পিডি হাসান মনসুরকে দিয়ে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করিয়ে নেয়। আমি এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রী থেকে শুরু করে রেলওয়ে ডিজি-এডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ লিখিতভাবে দুদকে জমা দিয়েছি। ইঞ্জিনগুলো কয়েক বছর না যেতেই রেলের গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে। ইঞ্জিন ক্রয়ে লুটপাটের ঘটনায় ওই সময়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। মন্ত্রী গ্রেফতার হলেও সাবেক ডিজি সামসুজ্জামান, এডিজি মঞ্জুর-উল-আলমসহ ওই চক্রের সবাই অধরা।
দুদকে জমা দেওয়া নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪টি প্রকল্পের আওতায় মেসার্স হুন্দাই রোটেম কোম্পানি মোট ৩৯টি এমজি লোকোমোটিভ ক্রয় করে। ক্রয় করা প্রতিটি লোকোমোটিভেই গুরুতর ত্রুটিবিচ্যুতি ও ঘাটতি পাওয়া গেছে। ২টি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন সাবেক ডিজি সামছুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন এডিজি মঞ্জুর-উল-আলমসহ তৎকালীন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। কোরিয়ায় কারখানা পরিদর্শনে রেলের ৬ কর্মকর্তা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতি ঢাকতে ওইসব কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়নি। ফাইল উঠানো হলেও সাবেক ডিজি সামছুজ্জামান ৪ মাস সেই নথি আটকে রাখে। ওই সময় দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তা রেলপথমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেন।
আরও জানা যায়, দুর্নীতিবাজদের কূটকৌশলে ইঞ্জিনগুলো প্রি-শিপমেন্ট ইনস্পেকশন সনদবিহীন অবৈধভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়। তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলসচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) প্রণব কুমারসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালক নূর আহাম্মদ হোসেনকে ওইসব ইঞ্জিন গ্রহণের জন্য সরাসরি চাপ প্রয়োগ করেন। নূর আহাম্মদ হোসেন ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট চক্রটি তাকে গালাগাল করে পিডি থেকে বাতিল করে হাসান মনসুর নামের এক কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ দিয়ে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইঞ্জিন কিংবা কোচ-রোলিংস্টকের যাবতীয় কেনাকাটায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একটি চক্র সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করত। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের মন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ওই চক্রের প্রধান ছিলেন। রোলিংস্টক, রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প থেকে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অর্থ লুটপাট তারা করতেন। এজন্য প্রায় সবকটি প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বাড়াতেন চক্রের প্রধানরা। হুন্দাই রোটেম কোম্পানির দেশীয় কর্ণধারখ্যাত ‘রনী’ ওই চক্রের মাঠপর্যায়ের ক্যাডার ছিলেন। ওই ক্যাডার এখন আত্মগোপনে থেকে আবারও দুর্নীতিবাজ চক্রটি রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একই কোম্পানি থেকে দোহাজারী-কক্সবাজার রুটের জন্য আরও ৩০টি লোকোমোটিভ ক্রয়ের তৎপরতা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, উন্নয়নের নেশা যদি লুটপাটের হয়-সেই উন্নয়নে যথাযথ সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। রেলের উন্নয়ন ঘিরে হরিলুট হয়েছে-এমনটা দুদকসহ মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ পড়েছে। লুটপাটের প্রমাণও মিলছে। ইঞ্জিন-কোচ হচ্ছে রেলের রক্ষাকবচ-সেই কবচেও লুটপাট। যুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিন প্রদান হয়নি-এমনটা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা কী করে মেনে নয়? তাছাড়া লুটপাটের অংশ হিসাবে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও মন্ত্রী-সচিব, মন্ত্রী-সচিবের পরিবার, পিএস, এপিএস, ডিজি, এডিজিসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন পরিদর্শনে গেছে। মূলত বিদেশের মাটিতে তারা ঘুরতে যায়, ওই সময় প্রকল্প মাথায় থাকে না। লুটপাট আর অবৈধ লেনদেন পাকাপোক্ত করতেই ওই সফরগুলো হয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের এখনই সময় দুর্নীতিবাজ, লুটতরাজদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
রেলওয়ে অবকাঠামো ও রোলিংস্টক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে ৯৬ ইঞ্জিনসহ রোলিংস্টক ক্রয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে একই মানের ইঞ্জিন চললেও গত ১৫ বছরে কেনা ইঞ্জিন রোলিংস্টকগুলো পদে পদেই বড় ধরনের ত্রুটি-সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ৯৬ ইঞ্জিনের মধ্যে ৩০-৩৫টি ত্রুটি অবস্থায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, লাইন রয়েছে, ইঞ্জিন-কোচের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ইঞ্জিন ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রয় না হওয়ায় সব সেকশনের এসব ইঞ্জিন চালানোও সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী জানান, ত্রুটি সারাতেও যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। নেই কোনো বরাদ্দও। এতে সমস্যা আরও বড় আকার হচ্ছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন বলেন, ইঞ্জিনসহ রোলিংস্টক ক্রয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি তদন্ত রিপোর্টেও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া দুদকও তদন্ত চালাচ্ছে। রেলভবনেও অভিযান চালানো হয়েছে। ইঞ্জিন-কোচ তথা রোলিংস্টক হচ্ছে রেলের রক্ষাকবচ-এসব ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি মানে ট্রেন পরিচালনায় চরম ব্যাঘাত হওয়া। বর্তমানে যন্ত্রাংশ ক্রয়ের মাধ্যমে যথাযথ সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান না করা হলেও ট্রেন পরিচালনায় ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা জরুরি।
ঊষার আলো-এসএ