UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

ঊষার আলো রিপোর্ট
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ৪:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বছরের প্রথম দিন থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও যথাসময়ে বই পায়নি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। রোজার ঈদের ছুটি শেষে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সব বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা। এতে দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় ধরে বই না পাওয়ায় বড় ধরনের শিখন ঘাটতিতে পড়েছে তারা। এদিকে নতুন বছরে স্কুলের ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) ছাড়া পুরো বছরে ছুটি থাকছে মোট ৭৬ দিন। যদিও এর মধ্যে প্রায় ২০ দিনের মতো সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এছাড়া বছরের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার আর শনিবার মিলে হয় মোট ৮২ দিন। সব মিলে পুরো বছরে ১৫৮ দিন ছুটি থাকছে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে। সেই হিসাবে পাঁচ মাসের বেশি ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া চলতি মাসের ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা, যা চলবে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে সেখানে নিয়মিতভাবে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। সামনে ঈদুল আজহার ছুটির পর শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। তখনো পরীক্ষার কারণে ক্লাসের বিঘ্ন ঘটবে। একদিকে যথাসময়ে বই না পাওয়া, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্যবই ছাড়া দীর্ঘ ছুটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বড় শিখন ঘাটতির মুখে পড়েছে। বছরের প্রথম দু-তিন মাস ঠিকমতো ক্লাস না হলে পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের শিখন ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। বছরজুড়ে দীর্ঘ ছুটি থাকায় গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিত করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তারা।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু বলেন, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করতে হবে। আন্দোলন ও নানা বিরূপ পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকে। এর সঙ্গে আছে ৭৬ দিনের বার্ষিক ছুটি। বেশির ভাগ দিন স্কুল বন্ধ থাকলে শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই শিফট চালু থাকায় সেখানে পর্যাপ্ত ক্লাস হয় না। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি এখন কাটিয়ে ওঠার সময় এসেছে। অথচ সেখানে উলটো চিত্র দেখা যাচ্ছে। ক্লাসে ঠিকমতো পাঠদান না হলে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য জমজমাট হয়ে ওঠে।

সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা অনুযায়ী আগামী বছর স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) ছাড়া মোট ৭৬ দিন ছুটি থাকবে। দীর্ঘ ছুটিগুলো হলো পবিত্র রমজান মাসের ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) শুরু হবে ২ মার্চ থেকে। ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবসসহ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে সে সময় টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকবে স্কুল। এই দীর্ঘ ছুটির পরে ৮ এপ্রিল থেকে আবার ক্লাস শুরু হবে স্কুলে। পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশেও টানা ১৫ দিন সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ছুটি। এ ছুটি শুরু হবে ১ জুন থেকে। ছুটি চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত। দুর্গাপূজায় এবার আট দিন (২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর) ছুটি থাকবে স্কুল। অবশ্য এ ছুটির মধ্যে লক্ষ্মীপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজ দহমসহ বেশ কয়েকটি ছুটি পড়বে। প্রতিবছরের মতো এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত তিন দিন ছুটি রাখা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক দিবস ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নিয়ম মেনে ছুটি থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু শেখার আছে। বছরে প্রায় অর্ধেক সময় যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে বাচ্চারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ দিবসে স্কুল বন্ধ রাখা সেটিও উচিত নয়। এখনকার বাচ্চারা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত। বছরের শুরুতেই বই না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম না হলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যেহেতু শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে বই পায়নি এবং শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ঠিকঠাক ক্লাস নেওয়া যায়নি, তাই সাপ্তাহিক বন্ধ দুই দিনের পরিবর্তে একদিন রাখা উচিত। পাবলিক পরীক্ষার অধীনে থাকা কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার পরে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। এতে শিক্ষার স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল করা যাবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনেক সময় স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ও বার্ষিক ছুটি থাকছে দীর্ঘদিন। এতে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এনসিটিবির সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে যথাসময়ে বই না পেয়ে শিক্ষার্থীদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

ঊষার আলো-এসএ