কঠোর পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বিশ্বজুড়েই সুপরিচিত জাপান। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই কর্মী সংকটে রয়েছে দেশটি। ফলে সেখানে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শ্রমসংকট। এ সমস্যা কাটাতে নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা।
এজন্য সপ্তাহে তিন দিন ছুটির কথা ভাবছে এশিয়ার এ দেশটি। খবর এপির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিয়ে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর কথা ভাবছে জাপান। দেশটিতে উদ্বেগজনক হারে শ্রমসংকট বেড়ে যাওয়ায় তা মোকাবিলায় এমন পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা।
২০২০ সালে জাপানের এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজ ইনক. কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটির পদ্ধতি চালু করে। তিন দিনের সময়সূচির বিকল্প প্রস্তাব করে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান মিজুহো ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। কোম্পানিতে এমন সিদ্ধান্ত আসার পর ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে চার দিনের কর্ম সপ্তাহের প্রস্তাব করা হয়। দেশটির আইনপ্রণেতারাও এটির সমর্থন জানান। কিন্তু পরে তা বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়ে যায়।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে দেশটির প্রায় ৮ শতাংশ কোম্পানি তাদের কর্মীদের তিন দিন বা তার বেশি ছুটির অনুমতি দেয়। যদিও ৭ শতাংশ কোম্পানি এক দিন বাধ্যতামূলকভাবে ছুটির অনুমতি দেয়।
জাপানের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই কাজপাগল। দেশটিতে মুখ গুঁজে বেশি সময় কাজ করার বিষয়টিকে প্রশংসার চোখে দেখা হয়। জাপানিদের সাধারণ ধারণা হলো, কোম্পানির জন্য ব্যক্তিগত সময় বিসর্জন দেওয়া যায়। তবে জাপান সরকার এখন জনগণের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে ‘স্বাস্থ্যকর’ ভারসাম্য আনতে চাইছে।
দীর্ঘ সময় কাজ করা জাপানিদের প্রথা। যদিও ৮৫ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, তারা তাদের কর্মীদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেয়। কর্মীরা কতক্ষণ ওভারটাইম করতে পারবেন, সে বিষয়েও বিধিনিষেধ আছে। তবে জাপানিরা ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ করে থাকেন— এর অর্থ, এসব ওভারটাইম নথিভুক্ত করা হয় না এবং এ কাজে তারা কোনও অর্থও পান না।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক সরকারি শ্বেতপত্রের তথ্যানুসারে, চলতি বছর জাপানে অতিরিক্ত কাজ করে অন্তত ৫৪ জন মারা গেছেন।
কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, শক্তিশালী শ্রমশক্তি ধরে রাখার জন্য জাপানিদের অতিরিক্ত কাজ করার এই মানসিকতা বদলাতে হবে। কারণ দেশটির জন্মহার দ্রুত কমছে। জন্মহার কমার পেছনে দেশটির মানুষের কাজের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াকেই বড় কারণ মনে করা হচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে ২০৬৫ সাল নাগাদ জাপানের কাজ করতে সক্ষম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ কমে সাড়ে ৪ কোটিতে নেমে আসবে। বর্তমানে এই সংখ্যা ৭ কোটি ৪ লাখ।