UsharAlo logo
শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় রিকশা চালালেন পাক হাইকমিশনার!

usharalodesk
নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  স্ত্রীকে রিকশায় রেখে প্যাডেল টানছেন ঢাকার পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ! স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন, রিকশায় চড়ে কোথায় যাবে বেগম? শুক্রবার সামাজিকমাধ্যমে এমন এক ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।

মুহূর্তেই ভিডিওটি নেটিজেনদের দৃষ্টি কেড়েছে।  গত বছরের শেষ দিকে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে জায়গা করে নেয় ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র।  ঢাকার রিকশা যে কোনো বিদেশি পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় বিষয়।

মূলত ঢাকার শহরের দৃশ্যপটকে চিহ্নিত করতে হোটেল লে মেরেডিয়ানের লবিতে রাখা রিকশা দেখে তর সইতে পারেননি পাকিস্তান হাইকমিশনার। শেষ পর্যন্ত চালিয়ে দেখেছেনও। শুধু তাই নয়, রিকশা চালকদের প্রতি এই কঠিন কাজের জন্য শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার পোস্ট করা ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘বলো কোথায় যাবে, বেগম? লে মেরেডিয়ানের ১৪তম তলায় রিকশা টানলাম। জীবিকা অর্জনের জন্য প্রায় সমস্ত আবহাওয়ায় সারাদিন ধরে টানাটানি করা সত্যিই খুব কঠিন। রিকশাচালকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। স্যালুট।’

পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে সানা কামরান মালিক নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনার সর্বদা এই শক্তি থাকুক যাত্রীদের প্রতি ভালোবাসা’।

মুবাশ্বিরুজজামান হাসান নামে একজন ব্যবহারকারী জানতে চেয়েছেন, রিকশায় যাত্রী কারা ছিলেন। প্রতিউত্তরে মজার ছলে সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেন— ‘স্ত্রী এবং কন্যা। তারা আমাকে ভালো পারশ্রমিক দেয়নি’।

পাকিস্তান হাইকমিশনারের এই রিকশা চালানো মূলত প্রতীকী। এর মাধ্যমে এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রচেষ্টা।

গত কয়েকদিনে ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ার বড় খবর, প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এতে নাকি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে নয়াদিল্লিতে। বলা যায়, এ উদ্যোগের নেপথ্যের বড় কারিগর পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী শাসনামলের পতনের পর, ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে নতুন মেরুকরণে রূপ দিতে তার কূটনৈতিক ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো।  যার ফলাফল, মাত্র তিন মাসের মাথায় দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ। শেখ হাসিনার আমলে পাকিস্তান বরাবরই নৈকট্য পেতে বহু চেষ্টা করেছে।

কিন্তু ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান সংক্রান্ত বিষয়ে দিল্লির পরামর্শ নিতেন হাসিনা। আর এ কারণে সব ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরপরও এখানকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন।

শেষ পর্যন্ত নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর, সুযোগ কাজে লাগতে সক্রিয় হয়ে উঠে ইসলামাবাদ। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোনকল, চিঠি প্রেরণ করেছেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এরপর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে তাদের বৈঠকও হয়। সর্বশেষ আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে দুই শীর্ষনেতার দেখা হয়।

বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম করাচি থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এলো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানি কার্গো জাহাজের নোঙর করার বিষয়টি ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রতীক’। এটি পাকিস্তান-বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত জটিল কূটনৈতিক সম্পর্কে উষ্ণতার নতুন দিগন্তের সূচনা করছে।

আর এই জটিল সম্পর্ক ভেদ করে ইতিহাসের অংশীদার হলেন হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। এটি তার কূটনৈতিক জীবনে বড় অর্জন বললেও অত্যুক্তি হবে না।

ঊষার আলো-এসএ