ঊষার আলো রিপোর্ট: করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন রোধে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরই জোর দিচ্ছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করলে তাকে জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া দেশে এখনই লকডাউন নয়। সে ধরনের পরিস্থিতি হয়নি বলে আপাতত স্বাস্থ্যবিধিতেই কঠোর হচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসাবে ঘর থেকে বের হলেই পরতে হবে মাস্ক। অন্যথায় শাস্তি নিশ্চিত। হোটেলে খেতে গেলে টিকার সনদ দেখাতে হবে। সনদ দেখানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জনসমাগম বন্ধে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের দ্রুত টিকা দিতে হবে। হাসপাতালের শয্যা প্রস্তুত রাখাসহ নিশ্চিত করতে হবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। এ ছাড়া টিকা কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি এবং কোয়ারেন্টিনের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। কোয়ারেন্টিনের সময় প্রয়োজনে পুলিশ পাহারার কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে।
সোমবার সচিবালয়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। লকডাউন দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, না, লকডাউনের সুপারিশ আমরা এখনো করিনি। কারণ এখনো সে ধরনের পরিস্থিতি হয়নি। লকডাউনের পর্যায়ে যাতে আমাদের যেতে না হয়, সেজন্যই আজকের এই প্রস্তুতি সভা। আপাতত প্রাথমিক পদক্ষেপ নিই। তারপর দেখা যাক কী দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা লকডাউনের কথা ভাবছি না। আমরা জোর দেব প্রতিরোধের ওপর। এজন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেগুলোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
বিমান চলাচলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একজন যাত্রী বিমানে ওঠেন। তাদের ভ্যাকসিনেশন থাকতে হয়, আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হয়, অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হয়। কাজেই এই বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমরা বলিনি।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ঢিলেঢালা ভাব আছে। আমরা চাচ্ছি এটাকে জোরদার করতে। আমরাও সহযোগিতা করব। আমরা চাচ্ছি ছাত্রছাত্রীদের দ্রুত টিকা দেওয়া হয়। এখন ক্লাস চলবে।
মন্ত্রী জানান, হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। অক্সিজেন আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা আছে। আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান। এখন ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত। তারা জানেন কীভাবে করোনা চিকিৎসা করতে হয়। তারা অনেক অভিজ্ঞ দেশবাসীও এ বিষয়টি জানে। তিনি বলেন, শঙ্কার বিষয় হলো করোনা বেড়ে যাচ্ছে। আজকের কথাই যদি বলি, আজ সংক্রমণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে, যা একের নিচে নেমে গিয়েছিল, এটা এখন আশঙ্কাজনক। মৃত্যুহার যদিও এখন কম আছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বাড়তে পারে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে। স্কুল-কলেজ নিয়ে ফের চিন্তা-ভাবনা হবে। আবারও পরিবহণের বিষয়ে কিছু চিন্তা-ভাবনা থাকবে। সভায় করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর যেগুলো আছে, সেখানে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানোর কথা হয়েছে। যা আমরা ইতোমধ্যে করেছি। আমরা ওখানে অ্যান্টিজেন টেস্টও করছি, পিসিআর টেস্টও করছি। কোয়ারেন্টিনের আরও বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেউ সংক্রমিত থাকলে তাদের যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিনের মধ্যে রাখা হোক পুলিশ পাহারায় যাতে কিনা কোয়ারেন্টিন থেকে লোক বেরিয়ে না যায়। ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টিন আমরা চাচ্ছি না।
সব ক্ষেত্রেই মাস্ক পরতে হবে। বাসে ও ট্রেনে উঠলে, মসজিদে গেলে অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। না পরলে জরিমানা করা হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে কেউ মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। আরেকটি তাগিদ দেওয়া হয়েছে, মানুষ যাতে দ্রুত টিকা গ্রহণ করে। টিকা যারা নিয়েছে তারা মাস্ক পরা অবস্থায় রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে, বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এজন্য টিকার সনদ দেখাতে হবে। যারা টিকা নেবে না, তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারবে না। যদি কোনো রেস্টুরেন্ট টিকার সনদ ছাড়া কাউকে খেতে দেয় তবে সেই রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে। হোটেলে খাওয়ার ক্ষেত্রে টিকার সনদ দেখানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, অবশ্যই সম্ভব। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামানো হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ১১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আট বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জেলার ডিসি অংশ নেন। এ ছাড়া পৌসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আট বিভাগের পুলিশের ডিআইজি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্ত হন। তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা কক্ষে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা ভার্চুয়ালি অংশ নেন।