UsharAlo logo
সোমবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনা সরকারের সচিবরা এখনো বহাল তবিয়তে, জনসেবা বিঘ্নিত

usharalodesk
অক্টোবর ১৬, ২০২৪ ১:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : আমলাতন্ত্রের জালে গোলমেলে অবস্থায় রয়েছে সরকারের প্রশাসন যন্ত্র। সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা নেই কমপক্ষে ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। মাঠপর্যায়ে ১ মাস ধরে দুই বিভাগে বিভাগীয় কমিশনার শূন্য। জেলা প্রশাসক (ডিসি) নেই ৮ জেলায়। যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য নোটিশ করা হলেও এসএসবির সভা গত ৪ মাস ধরে স্থগিত। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রায় বন্ধ।

বিগত সরকারের সময় ‘অকারণে বঞ্চিত’দের পদোন্নতি দেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের পদায়ন হচ্ছে না। পক্ষান্তরে বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং উপ-সচিবরা আছেন বহাল তবিয়তে।

এই শূন্যতা ও ব্যত্যয় নিয়ে কীভাবে প্রশাসন এগিয়ে যাবে-এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জনবল নিয়োগের কাজ চলমান। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের সৃষ্ট জঞ্জাল রাতারাতি শেষ হবে না। বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং পদায়ন নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে শূন্যতা ও বিরাজমান অস্থিরতার বিষয়ে সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। এসব পদ শূন্য বা ফাঁকা রাখা কোনোক্রমেই ঠিক হচ্ছে না। এতে জনসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তার অভাব বোধ করলে সরকার ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য সাবেক যোগ্য কর্মকর্তাদের উচ্চ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। বিরাজমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এছাড়া পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক যোগ্য লোক আছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তবে পদায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই সততা এবং যোগ্যতা প্রাধান্য দিতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সভাপতি ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, প্রশাসনে বিরাজমান স্থবিরতার অবসান চাই। পদোন্নতিপ্রাপ্ত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়ে আমরা বারবার বর্তমান প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু অজানা কারণে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের পদায়ন বিলম্বে হলে তারা আবারও বৈষম্যের শিকার হবে। তাদের পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা না হলে তারা আবার বঞ্চনায় শিকার হবে। পদায়ন তাদের পাওনা, তাদের অধিকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিগত আমলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা ভয়ে কাতর। কারণ বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ওই সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ও দক্ষতার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনের আশা অবান্তর। তারা ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ তাদের সচিবের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিনিয়র সচিব কিংবা সচিব না থাকা সরকারের জন্যও সুখকর নয়।

জানা গেছে, বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কোনো সচিব নেই। এছাড়া পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে কোনো সচিব নেই। পরিকল্পনা কমিশনের বিভাগে সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যের পদ ফাঁকা রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদকে ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, নৌপরিবহণ সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যকে ওএসডি করা হয়েছে।

বিগত সরকারের সময় বিভিন্নভাবে বঞ্চিত ২০৬ জন কর্মকর্তাতে আগস্টে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে তাদের আগের মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে মাত্র কয়েকজনকে সচিব হিসাবে পদায়ন করা হলেও বিগত সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত অধিকাংশ কর্মকর্তাকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পদায়ন করা হয়নি। যুগ্ম সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদায়নের আগে প্রধান উপদেষ্টার পূর্বানুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সে ক্ষেত্রে তাদের পদায়নসংক্রান্ত ফাইল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে ঢাকা এবং রংপুর বিভাগে কোনো বিভাগীয় কমিশনার নেই। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনাররা রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও দিনাজপুর কোনো ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ডিসি নিয়োগ দিতে গিয়ে ঘটে গেছে কেলেঙ্কারির ঘটনা। মাঝারি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে, তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। গঠন করা হয়েছে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি।

ঊষার আলো-এসএ