UsharAlo logo
রবিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনার পতনের পরেও থামছে না যুবলীগ নেতার তাণ্ডব

ঊষার আলো রিপোর্ট
এপ্রিল ২৬, ২০২৫ ৩:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক আকবর আলী। আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১৫ বছর এলাকায় তিনি ছিলেন যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। হাসিনার পতনের পরেও তাণ্ডব থামছে না এই নেতার।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সাতমেরা ও আশপাশের পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, কথায় কথায় মানুষ পেটানো, সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া হলেও আকবর আলী এখনো এলাকায় বহালতবিয়তে রয়েছেন। দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন দখলবাজি চাঁদাবাজি এলাকাবাসীকে হুমকি ধমকি ও নির্যাতন।

জানা যায়, ওই এলাকার সাকিমুল হকের ছেলে আকবর আলী। পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই মানুষটি একাধারে নেতা, ব্যবসায়ী ও দখলদার। কথায় কথায় মানুষ পেটানো, জমি দখল, দোকান থেকে চাঁদা আদায় সবই তার নিত্যদিনের কাজ। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন।

অনেকেই বলেছেন, আকবর আলী সরকার পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে নিজের প্রভাব খাটিয়ে পঞ্চগড়ের প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। এরপর তিনি সরকারি একাধিক ডিলারশিপ যেমন সারের ডিলার, চালের ডিলার, এমনকি টিসিবির পণ্য সরবরাহের দায়িত্বও নিজের কব্জায় নিচ্ছেন যথারীতি।

অভিযোগ রয়েছে, এসব সুযোগ সুবিধা গ্রহণের সময় তিনি নিজেকে ওপর মহলের লোক পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের চাপে রেখে প্রতিটি ডিলারশিপ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করতেন।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, তিনি বিভিন্ন সময় জমির প্রকৃত মালিকদের ভয় দেখিয়ে বা মারধর করে অন্যের সম্পত্তি জবরদখল করেছেন। তার পেছনে থাকে সবসময় সন্ত্রাসীদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সম্প্রতি আকরবর আলীর দখলের শিকার হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

তারা জানান, তাদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এবং তারা তাদের হারানো জমি ফিরে পেতে চান। সেনা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, আকবর আলী দীর্ঘদিন ধরে তার ৯ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। তরিকুল ইসলাম যখনই জমিতে যান তখনই আকবর আলী সন্ত্রাসী কায়দার তার ওপর হামলা করে। সম্প্রতি তার আক্রমণের শিকার হয়ে তরিকুল ইসলাম মাথায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ আকবর আলীকে গ্রেফতারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

একই এলাকার রুস্তম আলী জানান, আকবর আলী জোর করে তার বাবার একে একর ৩০ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছে।

ওই এলাকার জহিরুল ইসলামের অভিযোগ, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত আকবর আলী ও তার দল ভূমিদস্যু হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তারও সাড়ে তিন বিঘা জমি ও আব্দুস সোবহানের বাবার কেনা চল্লিশ শতাংশ জমি আকবর আলীর দখলে।

এ বিষয়ে আকবর আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযাগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে জমি জায়গা নিয়ে অনেকের সঙ্গে তার কিছু ঝামেলা আছে। যার জেরে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন ডিলারের লাইসেন্স থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অন্যের নামে লাইসেন্স নিয়ে তিনি ব্যবসা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহিল আজিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আকবর আলীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ঊষার আলো-এসএ