UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আক্ষেপ নিয়েই চিরবিদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের

usharalo
এপ্রিল ২০, ২০২১ ১১:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি : আক্ষেপ নিয়েই চির বিদায় নিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন (৭৮)। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) আকষ্মিকভাবে মারা যান এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার আক্ষেপ জানিয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেখতে চেয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের ছেলে মোহম্মদ সোহেল বলেন, ‘আব্বা আর নেই। তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা গেছেন। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাঁর আর নাম দেখা হলো না। মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানীর স্বাক্ষরিত দেশরক্ষা বিভাগের সদন থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর স্থান হয়নি। সেই কষ্ট নিয়েই বিদায় নিলেন।’
সোহেল জানান, বাদ আছর মরহুমের নামাজের জানাযা শেষে গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আমজাদ হোসেন ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বৈকালী তিন দিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। এখানে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন শহীদ হন। এ যুদ্ধের পর আবার রায়ের মহল বাসায় ফেরেন। কিন্তু বাড়িতেই কিছুই ছিল না। নব পরিণতা স্ত্রী আলেয়া খাতুনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে বিলের মধ্যে এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে স্ত্রীকে খুঁজে পান। এবার নিরাপদে স্ত্রীকে রেখে যুদ্ধের জন্য ছুটলেন ভারতের বশিরহাটে। সেখান থেকে যুদ্ধের জন্য ৯নম্বর সেক্টরের অধীন যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুরে অবস্থান নেন। ৯ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলীর অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংসহ বিভিন্ন কাজে অংশ নেন। এ সময় বাাঁশের লাঠি দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। যুদ্ধের পুরো সময়টাই সেখানে কাটিয়ে আবার খুলনায় ফিরে আসেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আমজাদ হোসেনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে পত্র দেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করলেও স্বীকৃতি মেলেনি।
৯ নং সেক্টরের যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট স ম বাবর আলী শেখ আজজাদ হোসেনকে স্বীকৃতি দিয়ে এক প্রত্যায়ন পত্রে বলেন, ‘তিনি (আমজাদ) ৯ নম্বর সেক্টরের আমার সাথে থেকে সরকারি পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমরে অংশ নিয়েছেন। তাঁর অবদান মনে রাখা উচিত।’
মাস দুয়েক আগে আক্ষেপ করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালবেসে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। দেশের জন্য লড়াই করেছি। ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়সহ নানা দপ্তর ঘুরেছি। কিন্তু স্বীকৃতি পাইনি। আজ তাদের জন্য খুলনার রায়েরমহল এলাকা ছেড়েছি, স্বাধীনতা বিরোধীই সেই চক্র এখন বড় মুক্তিযোদ্ধা, তারা দল করে। ভুল করেছি, রাজাকার হলে এখন কোটি কোটি টাকা মালিক হতে পারতাম।
মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করে আমজাদ হোসেন জানান, ১৯৬০ সালের জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমানকে নিয়ে খুলনায় আসেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাই শেখ আবু নাসেরের বাসায় ওঠেন। মীর্জা খাইবার, মহসিন সাহেব, শামসুর রহমান মানি ভাইয়ের সাথে আমরা তাঁকে ফুলতলা থেকে নিয়ে আসি, ঘরোয়া মিটিং করেন। সেই সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচয়, তিনি আমাকে ‘ছোকড়া’ বলে ডাকতেন। এরপর যতবার তিনি খুলনায় এসেছেন, তাঁর কাছে গিয়েছি। ৭০’র নির্বাচনে যখন তিনি খুলনায় জনসভা করেন, আনসার সদস্য হিসেবে সেই জনসভায় দায়িত্ব পালন করি। আনসারের ট্রেনিং নিয়ে কমান্ডার হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটি কাজে লাগে। খাইবার ভাই (বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা খাইবার হোসেন) ওই সময় পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধারের ট্রেনিং সহায়তা করি।
শেখ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শেখ সাহেবের জনসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম, যতদিন বেঁচে থাকবো আওয়ামী লীগ করবো। সত্তরের নির্বাচনে রায়ের মহলে সাড়ে ৬ হাজার ভোটের মধ্যে নৌকা দুটি ভোট পেয়েছিল। আমরা দুজন আওয়ামী লীগ করতাম। একজন মুন্সি তৈয়েবুর রহমান ও আমি! স্বাধীন বাংলাদেশেও সেখানে থাকতে পারিনি। বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আমজাদ হোসেন আরও বলেছিলেন, ‘দর্জির কাজ করে সংসার চালিয়েছি। টাকার জন্য আমার তিনটি ছেলেকে লেখাপড়া শিখাতে পারিনি। আমি কিছু চাইনা, শুধু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। তাকে বলতে চাই; নেত্রী আপনার বাবার হাত ধরে আওয়ামী লীগ করেছিলাম, এখন আপনার হাত ধরে দল ছাড়ছি। দল এখন আর আগের দল নেই। আগাছারা ঢুকে পড়েছে।’