UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইয়াসের প্রভাবে পাইকগাছার নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি; বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে এলাকা প্লাবিত

usharalodesk
মে ২৫, ২০২১ ৯:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পাইকগাছার নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। থেমে-থেমে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টিও হতে দেখা গেছে। দুপুরের জোয়ারের পানির প্রবল স্রোতে দেলুটির চকরি-বকরি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে এবং রাড়ুলীর মালোপাড়ার বাঁধ উপচে এ দুই ইউনিয়নের অংশ বিশেষ তলিয়ে গিয়ে মৎস্য ও কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করার চেষ্টা করছে। এলাকার মানুষ আইলা, ফণী, বুলবুল ও আম্পানের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে আরও একটি দুর্যোগ আঘাত হানার আশংকায় অনেকটাই উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব, পরপর কয়েকটি দুর্যোগের আঘাত এবং ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ টেকসই না করায় দুর্যোগ আসলেই দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে উপজেলার নদীবেষ্টিত ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। রাতের জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে কিংবা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। তবে এ সব ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত থাকলেও এখনো পর্যন্ত এলাকার কোন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি বলে জানাগেছে।

দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরের জোয়ারের প্রবল স্রোতে ইউনিয়নের ২০নং পোল্ডারের চকরি-বকরি প্রতিরক্ষা বাঁধের পূর্বের স্থান থেকে পুনরায় ভেঙ্গে যায়। এতে বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভাটার সময় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকাবাসী ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করে। এই এলাকার ৫ কিলোমিটারসহ ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। যার মধ্যে ২১নং পোল্ডারের জিরবুনিয়া, চৌমোহনী ও দেলুটির শিবসার পাশ ঘেষে ৫ কিলোমিটার, ২২নং পোল্ডারের কালিনগর, দারুণমল্লিক, তেলিখালী, বিগোরদানা ও দুর্গাপুর এলাকার ৩ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। লতা ইউপি চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল জানান, অত্র ইউনিয়নে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ১৮/১৯ নং পোল্ডারের পুতলাখালী সুভাষ সরকারের বাড়ি হতে পুতলাখালী কালি মন্দির পর্যন্ত আঁধা কিলোমিটার, উত্তর কাঠামারী সত্য বিশ্বাসের বাড়ী হতে মাহেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের বাড়ী পর্যন্ত আঁধা কিলোমিটার, হানি উত্তরপাড়া স্লুইচ গেট এলাকায় দেড়শ’ ফুট, মুনকিয়া নড়ানদী এলাকায় ২শ’ মিটার এবং ধলাই স্লুইচ গেট হতে ফজলুর ঘের পর্যন্ত আঁধা কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান গাজী জানান, সোলাদানা ইউনিয়নের ২৩নং পোল্ডারের পাটকেল পোতা, আমুড়কাটা স্লুইচ গেট, নুনিয়াপাড়া, বাসাখালী ও পতন, বেতবুনিয়া ও সোলাদানার আবাসন এলাকার আঁধা কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ৩টি আবাসন এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার না করায় এখানকার ৪শ’ পরিবার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, লস্কর ইউনিয়নের ১০/১২নং পোল্ডারের ভরেঙ্গা স্লুইচ গেট, বাইনতলা গেট, আলমতলা গেট, আলমতলা দক্ষিণ বিলের গেট জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের ঘের সংলগ্ন এলাকার বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাইনতলা খেয়াঘাট থেকে কড়ুলিয়া সানা বাড়ী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাস জানান, গড়ইখালী ইউনিয়নের ১০/১২নং পোল্ডারের কুমখালীর ফকিরবাড়ী সংলগ্ন, গাংরখী ও শান্তা স্লুইচ গেট এলাকার ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান জানান, গদাইপুর ইউনিয়নের বয়রা, বাইসারাবাদ, হিতামপুর ও পুরাইকাটী এলাকার আঁধা কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, রাড়ুলী ইউনিয়নের ৯নং পোল্ডারের মালোপাড়া ও ভড়ভুড়িয়ার গেট এলাকার ১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দুপুরের কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি উপচে মালোপাড়া তলিয়ে যায়। দেলুটি ইউনিয়নের সুকৃতি মোহন সরকার জানান, ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ গুলো দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া ঘন-ঘন দুর্যোগ আঘাত হানায় এলাকার বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ টেকসই করা না গেলে এভাবেই প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। পাশাপাশি আগামী দু’এক বছরের মধ্যে বৃহৎ এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। বেড়িবাঁধ টেকসই না করার ফলে এবং প্রতিবছর দুর্যোগ আঘাত হানায় এলাকা ছেড়ে মানুষ অনত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এর সমন্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র জানান। এ ক্ষেত্রে বেড়িবাঁধ টেকসই করা সহ উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে আলাদা পরিকল্পনা, বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও মেরামত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সাথে কথা বলা সম্ভব নয় বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, ঘূর্ণিঝড় মোতাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের ১০৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। থানার ওসি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে তাদেরকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বেই আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া আমাদের সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও সিপিপি সদস্যরা মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। ঝুকিপূর্ণ বাঁধ ইতোমধ্যে প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে জরুরি মেরামত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে এবং বেড়িবাঁধ টেকসই করার জন্য জাইকাসহ অনেক উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানান।

(ঊষার আলো-এমএনএস)