ঊষার আলো রিপোর্ট:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের সমাগম। তবে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে পারেনি হোটেলগুলো। পর্যটকদের পচা-বাসি খাবার পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে খাবার হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে। ফলে পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খাবার হোটেলগুলোকে জরিমানা করার পরও থামেনি মানহীন খাবার পরিবেশন।
মানসম্মত খাবার পরিবেশনে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক দফা তাদের জরিমানা করা হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে খাবার হোটেল মালিক সংগঠন বুধবার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকে খাবার হোটেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটকরা।
এদিকে কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই খাবার হোটেল বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। সকাল থেকে খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে তারা পাঁচ কিলোমিটার দূরে মৎস্যবন্দর আলীপুরে চলে যান। কিন্তু পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় আলীপুরের হোটেলগুলোকে খাবার সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
পর্যটকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে দুপুর থেকে পর্যটন মোটেলের রেস্তোরাঁ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব আবাসিক হোটেলে রেস্তোরাঁ রয়েছে সেগুলোও খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল মালিকদের সংগঠন।
খাবার হোটেল মালিকরা বলছেন, এক মাসের মধ্যে তাদের হোটেলগুলোতে তিন থেকে চার বার জরিমানা করা হয়েছে। রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের অন্য কোনো উপায় ছিল না।
তবে কোনো প্রকার আগাম আলোচনা ছাড়াই খাবার হোটেল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করায় জেলা প্রশাসন, আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমন হটকারী সিদ্ধান্তে পর্যটনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।
বুধবার ভোর থেকে রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় খাবার হোটেল মালিক সমিতি। তাদের অভিযোগ, দফায় দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ক্ষুব্ধ কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম মুন্সী মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ১০টায় স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়ে বুধবার সকাল থেকে খাবার হোটেল বন্ধ করে দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খাবার হোটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে মোটা অংকের টাকা জরিমানা করেন। একই হোটেলকে একাধিকবার জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের নামে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই কুয়াকাটার সকল খাবার হোটেল মালিক একত্রিত হয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মালিকানাধীন আল-মদিনা নামে একটি খাবার হোটেলকে গত ১১ আগস্ট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৬ আগস্ট পুনরায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় আমাকে দুই ঘণ্টা পুলিশ বক্সে আটকে রাখা হয়। সুদে টাকা ধার নিয়ে জেল খাটা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি।
খাবার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কলিম মাহমুদ বলেন, প্রশাসনের এই হয়রানি সামাল দিয়ে আমাদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব না। তাই আমরা প্রায় ৫০টি খাবার হোটেল মালিক একমত হয়ে বুধবার (১৭ আগস্ট) থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে আবাসিক হোটেল মালিকদের সংগঠন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ মোতালেব শরীফ বলেন, খাবার হোটেল বন্ধ থাকা বা রাখা সমাধান নয়। পর্যটকদের স্বার্থে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
মঙ্গলবার সকালে ৩০ সদস্যের একটি দলে মুন্সীগঞ্জ থেকে কুয়াকাটা বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলেন, সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। সঙ্গে পরিবারের শিশুসহ বয়স্ক লোকজন রয়েছে। তাই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।
ঝালকাঠি থেকে আগত পর্যটক শহিদুল ইসলাম বলেন, পরিবারের আট সদস্য নিয়ে সকালে কুয়াকাটা এসে পৌঁছেছি। কিন্তু খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় শিশু সন্তান নিয়ে না খেয়ে আছি।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন হঠকারী সিন্ধান্ত ট্যুরিজম ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে কিছু সংখ্যক পর্যটক কুয়াকাটা ছেড়েছেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক বলেন, পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় রেস্তোরাঁ মালিকদের আকস্মিক ধর্মঘট ডাকা অযৌক্তিক। পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য কুয়াকাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। জরিমানা করার পরও খাবার হোটেল মালিকরা পর্যটকদের পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করছেন। খাবার হোটেল মালিকরা তাদের যৌক্তিক দাবি থাকলে জেলা প্রশাসককে জানাতে পারেন।
ঊষার আলো-এসএ