UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় মাস বেতন না পেয়ে কেসিসির আউট সোর্সিংকর্মীদের মানবেতর জীবনযাপন

usharalodesk
জুলাই ১৩, ২০২১ ৯:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)’র আউট সোর্সিংকর্মী মোঃ রাসেল হোসেন। ভাড়া থাকেন নগরীর পশ্চিম টুটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ল সংলগ্ন আঃ রহিম বাবুর বাড়িতে ছয় হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। মা-বাবা, ভাই, স্ত্রীসহ ছয়জনের সংসার তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। দাদী ও বাবা অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। চার মাস বয়সের শিশু সন্তান মায়ের বুকের দুধ পায় না। তাই তাকে দুধ বাইরে থেকে কিনে দিতে হয়। টাকার অভাবেও দুধ কেনাও এখন বন্ধ। ছয় মাস আগে এ বাড়িতে ভাড়া এসেছে তার মধ্যে চার মাসেরই বাড়িভাড়া বকেয়া পড়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ১০ হাজার ৫০০ টাকা মাসিক বেতনে কেসিসির আউট সোর্সিং-এর চাকুরিতে যোগদান করেন রাসেল। কয়েক মাস সঠিকভাবে বেতন পেলেও পরে আর পাননি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলতি জুলাই মাস (ছয় মাস) পর্যন্ত তিনিসহ সকল আউট সোর্সিং পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বেতন পায়নি। বাড়ির সামনের মুদি দোকানদাররা বাকীতে আর চাল-ডাল কিছুই দিতে নারাজ। টাকার অভাবে দাদী ও বাবাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ধারদেনা করে চলছেন। তবে আর চলা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

শুধু রাসেল নন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আউট সোর্সিং-এর ১১৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী দীর্ঘ ছয় মাস বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এদিকে এসব কর্মী নিয়োগ ও হাজিরায় গড়মিলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গঠিত তদন্ত টিম ইতোমধ্যে রিপোর্ট দাখিল করেছে। তবে মেয়র খুলনায় না আসা পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান করতে পারছে না কেউই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন।

আরেক আউট সোর্সিং কর্মী আল আমিন। তিনি দক্ষ হওয়ায় ইতোমধ্যে সহকর্মীদের মাঝে লিডার হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। কিন্তু লিডার হয়ে তার লাভ কি। তিনি পাওনাদারদের কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, আউট সোসিং-এর সুপার ভাইজার হাফিজুর ইসলাম শুধু আজকাল করে আশ্বাস দিয়ে আসছেন। হাফিজুল ও তার সহযোগীরা তাদের নিয়োগ, হাজিরাসহ নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। যার জন্য মেয়র তদন্ত টিম গঠন করেছে। যা এখনও তদন্তাধিন।হাফিজুলের সহযোগী শাহিনুল তাদের হাজিরা নিত। আর হাজিরা খাতায় ১০/১২ জনের টিপ সই নিত এক এক জনের কাছ থেকে । এভাবে মাসের পার মাস সুপারভাইজার হাফিজুর ও শাহিনুল এবং তাদের সহযোগিতা আউট সোসিং-কর্মীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাদের প্রতি দিন হাজিরা চারশত টাকা হলেও দেয়া হতো ৩৫০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, কেউ সামান্য প্রতিবাদ করলে তাকে চাকুরি থেকে বিতাড়িত করে দিত। চাকুরি হারানো ভয়ে অসহায়ের মত আউট সোর্সিং কর্মীরা হাফিজুল, শাহিনুল এবং তাদের অনিয়মের সহযোগীদের কথা শুনে আসছে। তারপরও দীর্ঘ ছয় মাস বেতন না পেয়ে ক্ষুব্ধ এসব কর্মীরা মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তারা সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কেসিসির তেলের ট্যাংক গ্যারেজে এ ধর্মঘট পালন করে। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে শ্লোগান দেয়। তারা দুর্নীতিবাজদের বিচার চান। তারা তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি করেন।

তারা বলেন, তাদের বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা কাজে ফিরে যাবে না এবং নতুন করে কোন লোককে কাজ করতে দিবে না। বিক্ষোভে অংশ নেন হেলাল, রাসেল, মোঃ আল আমিন-১, সিরাজুল, আল আমিন-২সহ অর্ধশতাধিক আউট সোর্সিং পরিচ্ছন্ন কর্মী। এতে করে মঙ্গলবার কেসিসির পরিচ্ছন্নসহ বিভিন্ন বিভাগের জরুরী বন্ধ ছিল। সুপারভাইজার হাফিজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৬০/৭০ জন আউট সোর্সিং পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না।তাই তারা বেতনের দাবিতে কাজে যোগ দেয়নি। মেয়র ভুল বোঝার কারণে এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সমাধান হবে না।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: আজমুল হক বলেন, এ আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে বিষয়টি মেয়রকে জানানো হবে। আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ- হাজিরাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। মেয়র খুলনায় আসলে তাকে তদন্ত রিপোর্ট দেখানো হবে। যা করার তিনিই করবেন বলে।

(ঊষার আলো-আরএম)