UsharAlo logo
শনিবার, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুনিদের ফেরাতে আর কতকাল অপেক্ষা

usharalodesk
আগস্ট ১৫, ২০২৩ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার শেষ হয়েছে ১৪ বছর আগে। কিন্তু বিদেশে আত্মগোপনে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ পলাতক খুনিকে এখনো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

আত্মগোপনে থাকা পাঁচ খুনি হচ্ছে-লে. কর্নেল (অব্যাহতি) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব্যাহতি) এএম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব্যাহতি) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) আবদুর রশিদ ও রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে জানা গেছে। অন্য তিনজনের অবস্থান পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও শরিফুল হক ডালিমের সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তান অথবা লিবিয়ায়, আবদুর রশিদ লিবিয়া অথবা জিম্বাবুয়েতে এবং মোসলেহ উদ্দিনের সম্ভাব্য অবস্থান ভারতে।

ইতোমধ্যেই ছয় খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তাদের মধ্যে আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন দেশের বাইরে পালিয়ে ছিলেন। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এছাড়া পাঁচ আসামি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ, মেজর (অব.) একে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১০ সালে। আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।

জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আইন পলাতকদের ফেরানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এসব ঘাতক এখনো অধরাই রয়ে গেছে। তবে এদের ফিরেয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ পাঁচজনের মধ্যে দুজনকে দেশে আনার বিষয়ে আশাবাদী।

বাকি তিন খুনির অবস্থান পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। গোপনীয়তার কারণে এ মুহূর্তে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য জানানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ইন্টারপোল) শাখার মাধ্যমে পাঁচ খুনির বিষয়ে রেড নোটিশ জারি রয়েছে। ইতোমধ্যে রেড নোটিশের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে।

খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বিশেষ টাস্কফোর্সের প্রধান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সম্প তি তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। তাদের দেশে ফেরত আনতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কানাডা যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, সেটা উত্তরণের জন্য কানাডিয়ান সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। একটা স্টেজে গিয়ে আমরা বলব, আমাদের যে এতদিনের বন্ধুত্ব, সেই বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে, যদি তাকে ফেরত না দেওয়া হয়। আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিশন গঠনে আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এই কমিশন গঠনের প্রারম্ভিক কাজ হলো আইন তৈরি করা। এই আইনের ড্রাফট ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে সেটি জাতীয় সংসদে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে বদলে দেওয়ার জন্য যে কলঙ্কিত চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল, যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল, সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোই হবে কমিশনের মূল উদ্দেশ্য। মন্ত্রী একই সঙ্গে বলেন, কমিশনের কাজ প্রতিহিংসামূলক হবে না, কমিশন নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেভাবেই কাজ করবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এরপর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয় পরবর্তী সরকার। শুধু তা-ই নয়, খুনিদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। সামরিক সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে খুনিরা রাজনৈতিক দল গঠন করে অনেক অপকর্ম করে। কোনো কোনো খুনি এমপিও হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে করা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় খুনিদের বিচারপ্রক্রিয়া। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ১২ খুনির মধ্যে গ্রেফতার থাকা পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

জানা যায়, কানাডায় অবস্থানকারী নূর চৌধুরী দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিল। কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছে দেশটির আদালত। এ ব্যাপারে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কোনো আসামিকে হস্তান্তর করা কানাডার আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। এ কারণে আইনি জটিলতায় আটকে আছে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা। ২০০৪ সালে খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছিলেন দেশটির আদালত। তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নূর চৌধুরীর অন্য এক আবেদনে ওই আদেশ ঝুলে থাকায় সে কানাডায় বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে।

পলাতক খুনিদের আরেকজন মোসলেহ উদ্দিন ভারতে অবস্থান করছে বলে তথ্য রয়েছে। এর আগে তার জার্মানিতে অবস্থানের তথ্যও ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনতে ২০১৫ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি পরামর্শক সংস্থা স্কাডেন এলএলপিকে যুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার। সংস্থাটি এ বিষয়ে মর্কিন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরতের বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ২০১৬ সালে মার্কিন আইন দপ্তরে চিঠি পাঠান। স্কাডেন এলএলপি ২০১৭ সালে জানায়, রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত দিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

এদিকে খুনি রাশেদ চৌধুরীর মামলার রিভিউ করার জন্য নথি পাঠাতে অভিবাসন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। এমন নির্দেশের পর রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ আইনি প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে, এ বিষয়ে কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না। রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় পর্যালোচনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের নথি তলবের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনিকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।

দুই খুনির অবস্থান নিশ্চিত নয় : দুই খুনি শরিফুল হক ডালিম ও আবদুর রশিদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া, সেনেগালসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করলেও তারা স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে বসবাস করছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।

ঊষার আলো-এসএ