UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রত্যাশা সেমিফাইনাল

koushikkln
অক্টোবর ৩, ২০২৩ ১০:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. সাঈদুর রহমান : দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচের একটিতে বাংলাদেশ জিতেছে, একটিতে হেরেছে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্দান্ত নৈপুণ্য নতুন করে বাংলাদেশের সমর্থকদের আশার পালে হাওয়া জুগিয়েছে। অনেক বিতর্ক মাথায় নিয়ে সাকিব আল হাসান দেশ ছেড়েছেন। সাকিব আল হাসান হচ্ছেন বাংলাদেশের একমাত্র চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। সমস্ত বিতর্ককে ধামাচাপা দিয়ে তিনি সবসময় ফিরে আসেন, ফিরে আসেন বীরের বেশে, ফিরে আসেন জয়ীর বেশে। তামিম ইকবাল ইস্যুতে একদল মানুষ সাকিব আল হাসানকে ভিলেন বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের অবদানকে ভুলে গেছেন। হ্যাঁ, তামিম ইকবাল দলে থাকলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শক্তি বাড়তো। ওপেনিং নিয়ে যে সমস্যা বাংলাদেশের, তামিম ইকবাল থাকলে তা হয়তো অনেকটাই দূর হয়ে যেত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইদানিং তামিম ইকবাল সেই রকম ফর্মে ছিলেন না, যে রকম ফর্মে থাকলে একজন ক্রিকেটার একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারেন। সেই কথা বলতে গেলে সাকিব আল হাসানের কথাই বলতে হয়। সাকিবের পক্ষেই সম্ভব একার হাতে ম্যাচ জেতানো। তবে যাই ঘটুক না কেন, আমাদের সকলেরই এখন কর্তব্য, সব বিতর্ককে ধামাচাপা দিয়ে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানানো। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচে তানজিদ হাসান তামিম এবং লিটন দাস ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে গিয়ে দুজনেই রান পেয়েছেন। তানজিদ হাসান তামিম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচেও রান পেয়েছেন। তবে তারপরও বিশ্বকাপে তিনি দলকে কতটা ভরসা দেবেন, সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপের মতো এত বড় একটা মঞ্চে তরুণ তানজিদ হাসান তামিমের অনেক বেশি ভালো কিছু করে দেখানো কঠিন। তারপরও যদি অ্যাভারেজ একটা রান তিনি করতে পারেন, একটা দুটো ম্যাচে ভালো ইনিংস খেলতে পারেন, তাহলে হয়তো ওপেনিং এর একটা স্লটের দুশ্চিন্তা দূর হবে বাংলাদেশের। লিটন দাস শ্রীলংকার বিরুদ্ধে রান পেয়েছিলেন, তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আবারও ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে তিনি কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেল। দীর্ঘদিন ধরেই লিটন দাস ফর্মে নেই। তার কোন কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। ফুট ওয়ার্ক, শট সিলেকশন, টাইমিং, প্লেসমেন্ট- সবকিছুতেই গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে লিটন দাসের। এতকিছু পরও টিম ম্যানেজমেন্ট লিটন দাসের উপর আস্থা রেখেছেন। অতীতে অনেক ভালো ইনিংস উপহার দিয়েছেন লিটন দাস। হতে পারে একটা দু’টো ম্যাচে রান পেলেই, তিনি আবারও তার হারানো ফর্ম ফিরে পাবেন। তিন নম্বর পজিশন নিয়ে আপাতত কোন চিন্তা নেই। নাজমুল হোসেন শান্ত এই জায়গায় অনেক বেশি নির্ভরতা দিয়ে চলেছেন। এশিয়া কাপে সেঞ্চুরি করেছেন। নিয়মিত রান পাচ্ছেন। যদিও দুটির মধ্যে একটি মাত্র প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি, তারপরও নাজমুল হোসেন শান্তর উপর নির্ভর করা চলে। তাওহীদ হৃদয় শ্রীলংকার বিরুদ্ধে গোল্ডেন ডাক পেয়েছিলেন, আউট হয়েছিলেন অনেকটা দৃষ্টিকটু ভাবে। তারপরও বলা যায়, তাওহীদ হৃদয় অনেক ম্যাচেই ভালো করবেন। সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম- দুজনেই বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক। কখনো তারা রান পাবেন, কখনো পাবেন না। কিন্তু সব সময়ই দলের এই সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের উপর ম্যাচের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে। মেহেদী হাসান মিরাজ বেশ কিছুদিন থেকে যথেষ্ট ভালো ক্রিকেট খেলছেন। সাকিব আল হাসানের পর তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা অলরাউন্ডার। এশিয়া কাপে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হঠাৎ করেই ওপেন করতে নেমে তিনি সেঞ্চুরি করে দলকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। ফলে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করতে অনেক সময় হয়তো দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে বারবার ভাবতে হবে। তবে দলের প্রয়োজনে মেহেদী হাসান মিরাজকে যে একেক সময় একেক জায়গায় ব্যাটিং করতে হবে, সেটা আগাম অনুমান করা যায়। মাহমুদ‌উল্লাহ রিয়াদ হয়তো সব ম্যাচে একাদশে অন্তর্ভুক্ত হবেন না। তবে কোন ম্যাচে টপ অর্ডার কলাপ্স করলে হয়তো মাহমুদ‌উল্লাহ রিয়াদ দলের প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকার লড়াইটা করতে পারবেন। শেখ মাহাদী হাসান ব্যাট এবং বল – দুভাবেই দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পারবেন। বোলিং এর ক্ষেত্রে অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশ খুব ভালো জায়গায় আছে। তাসকিন আহমেদ যথেষ্ট ভালো বল করেন। এশিয়া কাপে শরিফুল ইসলাম দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। হাসান মাহমুদও কখনো কখনো যথেষ্ট কার্যকর। মুস্তাফিজুর রহমান তার হারানো ফর্ম অনেকটাই ফিরে পেয়েছেন। পুরনো বলের পাশাপাশি ইদানিং নতুন বলেও ভালো করছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে শুরুতেই তাকে বল করতে দেখা গেছে। এখন কাটারের পাশাপাশি উইকেটের দুই দিকেই তিনি স্যুইং করাতে পারেন। এই অস্ত্র যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে, যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই তিনি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেন। তরুণ তামজিম হাসান সাকিব এশিয়া কাপে অভিষেকেই ভালো বল করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজেও তিনি নির্বাচকদের আস্থা ধরে রেখেছেন। ফলে পাঁচজন পেস বোলার দলে থাকায়, টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেটের কন্ডিশন দেখে পরিস্থিতি অনুযায়ী পেস বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের স্পিন ডিপার্টমেন্টও ভারতের উইকেটে যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। নাসুম আহমেদ ব্যাটিংয়েও যথেষ্ট ভালো। ফলে ব্যাটিংটা ভালো হলে, বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যাটিং ভালো হলে, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেমিফাইনালে খেলাও সম্ভব।

ঊআ-বিএস